বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে সময় বেধে দিল শিক্ষার্থীরা

বরিশাল সিটির সদ্য অপসারিত মেয়র ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি। সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য অপসারিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বরিশালের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

আজ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে আইনের আওতায় আনা এবং সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মাসুমা আক্তারকে পদত্যাগের সময় বেধে দেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের একদল কর্মচারী ও সেবাপ্রত্যাশী স্থানীয় বাসিন্দারা একাত্মতা প্রকাশ করে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সদ্য অপসারিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও বর্তমান সচিব মিলে সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। তাঁদের যৌথ কারসাজিতে অবৈধ নিয়োগ, প্রতিটি দপ্তরে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। এসব অনিয়মের ইতি টেনে সিটি করপোরেশনকে জনবান্ধব করার আহ্বান জানান উপস্থিত আন্দোলনকারীরা।

কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ও আইন বিভাগের ছাত্র মাইনুল ইসলামসহ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সদ্য অপসারিত হওয়া মেয়রের দুর্নীতির তদন্ত দাবি করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নগরবাসীকে নিয়ে এই কর্মসূচি করেছি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এই অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহায়তা করায় তাঁর অপসারণ দাবি করেছি।’

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মো. রাকিব হাসান বলেন, ‘সদ্য অপসারিত মেয়র খায়ের আবদুল্লাহ ও বর্তমান সচিব মাসুমা আক্তার মিলে সিটি করপোরেশনের দরপত্র ও বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি করে ব্যাপক অর্থ লোপাট করেছেন। তাঁরা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবৈধ নিয়োগ, প্রতিটি দপ্তরে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন এবং সব কাজে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। তাই আমরা সচিবের অপসারণ ও সদ্য সাবেক মেয়রের বিচার দাবি করছি।’

আরেক শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সদ্য অপসারিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ করপোরেশনের বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ লোপাট করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর ফিরিস্তিও প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে বা তাঁর দোসরদের আইনের আওতায় আনতে পারেননি। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, বরিশাল সিটি করপোরেশনের আজকের পরিণতির জন্য যাঁরাই দায়ী, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক।’

কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। সোমবার দুপুরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের সামনে

সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে চান মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। এরপর ১৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে আদেশ জারি করে। পরে ওই দিনই বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলীকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর বরিশালসহ দেশের ১২ সিটির কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করে সরকার।

গত বছরের ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। বরিশালের রাজনীতিতে তাঁর আগে কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও হঠাৎ তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই হওয়ার সুবাদে তিনি এখানে দলীয় মনোনয়ন পান। তিনি বরিশালে দলের প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর একমাত্র ভাই ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে।

তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে আবুল খায়েরের। কারণ, এখানে আগে মেয়র ছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। সাদিক মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় চাচা-ভাতিজা এখানে দ্বন্দ্বে জড়ান, যা তখন দেশজুড়ে আলোচিত ঘটনা ছিল।

শিক্ষার্থীদের তোলা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সিটি করপোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অসুস্থতার কারণে বর্তমানে ছুটিতে। শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, হঠাৎই এই অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে। কেন, কোন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁরা এ ধরনের কর্মসূচি করেছেন, সেটাও আমাদের জানা নেই। শুনেছি তাঁরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সঙ্গে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তাঁরা সমন্বয়ক নন।’

তবে যোগযোগ করা হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। তবে ফেসবুকে ওই কর্মসূচির ছবি দেখেছি। এতে মাইনুলসহ কয়েকজন সমন্বয়ক ছিলেন।’