‘সবার মুখে ছিল মুখোশ। ২০ থেকে ২৫ জন হবে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন। কেউ কেউ কোপাতে থাকেন। প্রাণ বাঁচাতে যে দিকে পেরেছেন, পালিয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের রাউজানে একদল মুখোশধারীর হামলায় আহত মো. জসিম উদ্দিন (৫০) এভাবেই ঘটনা বর্ণনা দিচ্ছিলেন। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সেখানে তিনি ছাড়াও একই ঘটনায় আহত জানে আলম (৪৪) ও মো. সাইফুদ্দিন (৩১) নামের দুই ব্যক্তি ভর্তি আছেন।
উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিশপাড়া গ্রামের আসদ আলী মাতব্বরপাড়া মসজিদ এলাকায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ১২ থেকে ১৫ জন গুলিবদ্ধ হন। এর মধ্যে ১১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন আছেন তিনজন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গতকাল রাত ৯টার দিকে। স্থানীয় দোকানি মহিউদ্দিন সড়ক ধরে নোয়াপাড়া সদর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। সড়কটি অন্ধকার থাকায় তিনি হামলাকারীদের দেখেননি। তাঁরা মহিউদ্দিনের পথ রোধ করে মুঠোফোনে কাকে খুদে বার্তা দিয়েছেন, এমন প্রশ্ন করে মারধর ও কুপিয়ে আহত করেন। একপর্যায়ে তিনি আহত অবস্থায় পালিয়ে ঘরে চলে আসেন। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মুখোশধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন।
আহত জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তিন মাস আগে প্রবাস থেকে ফিরেছি। মহিউদ্দিন আর আমরা সবাই একই বাড়ির। তাঁকে মারধর করা হয়েছে শুনে আমরা যাই সেখানে। মোবাইলে রাজনৈতিক ম্যাসেজ দেওয়া নিয়ে মহিউদ্দিনকে মারধর করা হয়। কিন্তু সে এমন কিছু করেনি। আমরা কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না।’
গুলিবিদ্ধ হয়ে উপজেলা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের গায়ে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. রিভু রাজ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আহত বাকি তিনজনের শরীরে গুলির চিহ্ন নেই। তবে জখমের দাগ রয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে বাড়ির লোকজন আহত হয়েছেন, সেটি নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের পুরোনো বাড়ি নামে পরিচিত। তাঁর ছেলে কামাল উদ্দিনের ওপর হামলা করার জন্যই মুখোশধারীরা গিয়েছিলেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে হামলাকারীরা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। থানা-পুলিশ বলছে, মুহাম্মদ মামুনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তিনি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। মামুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক নুরুল আলম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় দলীয় কারও সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে। হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি মুহাম্মদ মামুনের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী গতকাল রাতে তাঁর প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের ছেলে কামাল উদ্দিনকে আক্রমণ করতে যায়। এলাকাবাসী তাতে বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে ১২ থেকে ১৫ জন সাধারণ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়।
ওসি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা এর আগেও কামাল উদ্দিনের বাড়িতে একাধিকবার গুলি ছুড়ে তাঁর ওপর হামলা করেছিল। ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ। আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এখনো মামলা হয়নি। তবে আজ রাতের মধ্যে মামলা করবেন বলে জানা গেছে।