কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন

আজীবন বহিষ্কৃত হওয়া বিএনপি নেতা–কর্মীরা নির্বাচন থেকে সরছেন না

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১২ নেতাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বহিষ্কৃত নেতা–কর্মীদের কেউই আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যাননি। উল্টো বহিষ্কৃত হওয়া নেতা–কর্মীদের মধ্যে অনেকে নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, এই কঠোর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ না দিয়ে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তাঁদের নির্বাচনে লড়তে বাধ্য করেছে।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন আজ ফেসবুক লাইভে এসে নির্বাচনে লড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া কেউ কেউ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। এর আগে ২২ মে বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে তাঁদের বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন কক্সবাজার জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী; জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম; কক্সবাজার পৌর মৎস্যজীবী দলের সভাপতি এম জাফর আলম হেলালী; জেলা বিএনপির সদস্য এস আই এম আকতার কামাল আজাদ; কক্সবাজার পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি আবছার কামাল, সাধারণ সম্পাদক ওসমান সরওয়ার; জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার, দপ্তর সম্পাদক জাহেদা আকতার; কক্সবাজার পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম; জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক শাহাব উদ্দিন, সদস্য ওমর সিদ্দিক ও কক্সবাজার পৌর যুবদলের সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন।

বহিষ্কৃত নাসিমা আকতার পৌরসভার সংরক্ষিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘটনায় জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আজ দুপুরে ফেসবুক লাইভে আসেন। লাইভে নাসিমা বলেন, ‘দল আমাদের ছাড়লেও আমরা দলকে ছাড়তে পারব না। আমরা ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তার আগেই আমাদের বহিষ্কার করা হলো। তা–ও আজীবনের জন্য। এখন নির্বাচন করা ছাড়া উপায় নেই।’

এর আগে নাসিমা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে যদি জানতাম দলের নিষেধাজ্ঞা আসবে, তাহলে প্রার্থী হতাম না।’

এর আগে গতকাল সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে লড়াই করে যাবেন। এ বিষয়ে আশরাফুল হুদা বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পর তিনি কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন, ২৫ মে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। কিন্তু সেই সুযোগ না দিয়ে তিনিসহ দলের ত্যাগী ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। কারণ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে দলের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে, এমন কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে না।

১২ কাউন্সিলর প্রার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘটনায় বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের মধ্যেও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে নেতাদের বহিষ্কার করা যায়। কিন্তু আজীবনের জন্য দলের গুরুত্বপূর্ণ ১২ জনকে বহিষ্কার করা ঠিক হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েকজন নেতা বলেন, ১২ নেতাকে আজীবনের বহিষ্কারের ঘটনায় অন্য কারও ইন্ধন থাকতে পারে। বিএনপির বহিষ্কৃত কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে না থাকলে কার লাভ, কার ক্ষতি—সেই হিসাব হয়তো অনেকে করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ওই ১২ নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নিয়ে নেতা–কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলেও করার কিছু নেই। তবে ২৫ মে বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে যদি কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন, তাহলে তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি কেন্দ্রে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৬ জন ও কাউন্সিলর পদে ৬১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও ২৬ মে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।