গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, চার মাস গেছে, এখনই দেখি পুরোনো আমলাতন্ত্র তাদের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দেখাচ্ছে এবং আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারও সেই দৌরাত্ম্যের মধ্যেই খাবি খাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা অনেক চেষ্টা করছেন; কিন্তু তাদের চেষ্টা আটকে যাচ্ছে বহু জায়গায়, লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে।
গণসংহতি আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার উদ্যোগে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষে গণসংলাপের আয়োজন করা হয়। ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক এই সংলাপ নগরের টাউনহলের মুক্তমঞ্চে আজ শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হয়। চলে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন।
সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা দেখছি, জনগণের দাবিদাওয়া যখন সামনে আসে, তখন একটা সামান্য জিনিস দিনের পর দিন আটকে থাকে। শ্রমিক-কর্মচারীদের, শিক্ষকদের, নানা পেশার মানুষের দাবি দাওয়া আছে। সেই ন্যায্য দাবিদাওয়া পূরণ হয় না কেন। এই অভ্যুত্থানের সরকারও যদি জনগণের দাবিদাওয়া পূরণ না করে, তাহলে কি এই অভ্যুত্থান টিকে থাকবে না। কারণ, অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি তো জনগণ। কারা আটকে দিচ্ছে, কারা এখনো দেশের সব মানুষের দাবিগুলোকে বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের চিহ্নিত করা দরকার। এই বাধা সৃষ্টি মানেই হচ্ছে পুরোনো ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে চায়। মানুষকে হতাশ করে দিতে চায়।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আজকে শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীরা যদি তাঁদের দাবি আদায় না করতে পারে, তাহলে এই সরকারকে মানুষ আগের মতোই ভাববে। কাজেই সরকারকে সতর্ক হতে হবে। আমলাতন্ত্রের লাল ফিতার দৌড় ভেঙে দিতে হবে। আমরা বলছি, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। কারণ, বিদ্যমান বন্দোবস্ত একটি ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত, কর্তৃত্ববাদী বন্দোবস্ত, স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত। এর মধ্যে যাঁরাই ক্ষমতায় যায়, তাঁরাই ক্ষমতা ব্যবহার করে স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্ববাদ এগুলো কায়েম করে। শেখ হাসিনা তার সর্ব্বোচ্চটা দেখিয়ে দিয়ে গেছে, কী কী করা যায়। ভেবেছিলেন, এভাবে শক্তপোক্ত করে পুরোটাকে যদি জমিদারি বানিয়ে ফেলা যায়, তাহলে বোধহয় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তাঁকে বারবার বলেছিলাম, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে না। জনগণ যেদিন জেগে উঠবে, সেদিন আপনার পালাতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, অনেকে পালানোর জায়গা এখনো পাচ্ছেন, ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এর অর্থ হচ্ছে শাসকের পতনের পরও এখনো ব্যবস্থার মধ্যে অনেক লোক আছে, যারা এসব খুনিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। কাজেই ব্যবস্থাটার বদল ঘটাতে হবে। ব্যবস্থার বদল না ঘটলে এই ব্যবস্থায় আবার একটি ফ্যাসিস্টের জন্ম নেবে। সেই কারণে নতুন বন্দোবস্ত দরকার। বন্দোবস্তের জন্য দরকার নতুন সংবিধান। যে সংবিধানে ক্ষমতার কাঠামো হবে গণতান্ত্রিক, যে সংবিধান গ্যারিন্টি দেবে জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্র।
অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক মোস্তাফজির রহমান সভাপতিত্ব ও সদস্যসচিব এ আর এম মুসাদ্দিক আসিফ সঞ্চালনা করেন। বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনরে রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ, জাতীয় পরষিদরে সদস্য শামসুল আলম, সম্মিলিত পেশাজীবী সংহতির আহ্বায়ক মির্জা নাজমুল হুদা, জাতীয় পরষিদরে সদস্য অমিত হাসান, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাহাত জাহান হোসেন প্রমুখ।