পল্লী বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল মা ও দুই শিশুসন্তানের

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া মা ও দুই সন্তানকে দাফনের জন্য পাশাপাশি তিনটি কবর তৈরি করা হচ্ছে। শনিবার দুপুরে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ঢালমারা গ্রামে
 ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের বাকেরগঞ্জে বিদ্যুতের ছিঁড়ে যাওয়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে এক গৃহবধূ ও তাঁর দুই শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের ঢালমারা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া তিনজন হলেন ওই গ্রামের রিয়াজ মোল্লার স্ত্রী সনিয়া বেগম (৩০), তাঁদের মেয়ে রেজভী আক্তার (১২) ও ছেলে সালমান (৯)।

খবর পেয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঢালমারা গ্রামের রিয়াজ মোল্লার বাড়ির বাগানের ভেতর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ লাইনের তার পার্শ্ববর্তী বাড়িতে গেছে। সেই তার দুদিন আগে ছিঁড়ে বিভিন্ন হয়ে গাছের ওপর ও মাটিতে পড়ে ছিল। আজ দুপুর ১২টার দিকে রিয়াজ মোল্লার শিশুপুত্র সালমান ওই বাগানে লেবু পাড়তে গিয়ে প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এ সময় সালমানের ডাক-চিৎকার শুনে তার বোন রেজভী ও মা সাদিয়া বেগম সেখানে ছুটে যান। সালমানকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁরাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার ছিঁড়ে পড়ার বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে আগেই জানানো হয়েছিল।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা ও দুই সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে ওই বাড়িতে গ্রামবাসীর ভিড়। শনিবার দুপুরে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ঢালমারা গ্রামে

প্রতিবেশী আমেনা বেগম জানান, বিদ্যুতের তারে আগুন জ্বলতে দেখে চিৎকার–চেঁচামেচি করলে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। পরে ফোন করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এ খবর জানানো হয়। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হওয়ার পরে তাঁদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। রিয়াজ-সাদিয়া দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলে ছিল। দুই সন্তান মারা যাওয়ার পর দুই বছর বয়সী আরেক ছেলেসন্তান বেঁচে রইল।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, তার ছিঁড়ে পড়ার বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে আগেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা আসতে বিলম্ব করায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। সময়মতো তারা এলে হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটত না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১ বাকেরগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আলী উর রহমান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি বরিশাল থেকে, অপরটি ঢাকা থেকে করা হয়েছে। দুটি কমিটিকেই আগামীকাল রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না।’

বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, ‘আপাতত নিয়ম অনুযায়ী অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। তবে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার মামলা দিলে সেটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’