নীলফামারীতে আজ শনিবার সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ হয়েছে। এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পৌর সুপারমার্কেটের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগ। একই সময়ে পৌর সুপারমার্কেটে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রার জন্য সমবেত হয় জেলা বিএনপির একাংশ। দুই সভাস্থলের দূরত্ব ছিল মাত্র ৫০ গজের মতো। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাস্থল থেকে কয়েকজন যুবক বিএনপির সভাস্থলে হামলা চালিয়ে তাদের টাঙানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে চেয়ার ভাঙচুর করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ আবার সমাবেশ শুরু করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের সভাস্থলে অবস্থান নেন। বেলা একটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ শেষ করে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে যায়। পরে বিএনপি সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার।
বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মীর সেলিম ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আক্তারুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক সেফাউল জাহাঙ্গীর, জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সাল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আজম, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মারুফ পারভেজ প্রমুখ।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলমের নেতৃত্বে শহরের বড় বাজারে পৃথক পদযাত্রা ও সমাবেশ হয়। তারা শহরের গাছবাড়ি থেকে পদযাত্রা শুরু করে বড় বাজার ট্রাফিক মোড়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোস্তফা হক প্রধান। বক্তব্য দেন পৌর বিএনপির সভাপতি মো. মাহবুব উর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আল মাসুদ চৌধুরী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাহেদুল ইসলাম, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মগ্নি মাসুদুল আলম প্রমুখ।
জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. হাফিজুর রশিদ। বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মমতাজুল হক, সহসভাপতি অক্ষয় কুমার রায়, মো. আমজাদ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াদুদ রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মসফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন প্রমুখ।
জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করি। একই সময়ে আমাদের দলীয় কার্যালয়ের অদূরে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে। আমরা বলেছি, তারা কর্মসূচি শেষ করলে আমরা কর্মসূচি শুরু করব। এ অবস্থায় বিনা উসকানিতে তারা আমাদের সভাস্থালে হামলা চালিয়ে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এতে আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।’
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে পৌর সুপারমার্কেটের সামনে শান্তি সমাবেশের জন্য মঞ্চ তৈরি করি। পরে তারাও (বিএনপি) আমাদের সভা মঞ্চের অদূরে কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে বিএনপি জানায়, আমাদের কর্মসূচি শেষ হলে তারা তাদের কর্মসূচি শুরু করবে। কিন্তু আমাদের সভা শুরু হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নানা রকম উসকানিমূলক ও অশ্লীল বক্তব্য দিতে থাকেন। আমাদের নেতা-কর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রউফ বলেন, ‘পাশাপাশি দূরত্বে দুই দলের কর্মসূচি ঘোষণার কারণে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে বিএনপি জানায় আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শেষে তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শুরু হলে বিএনপির সভাস্থল থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’