গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের শিরিরচালা এলাকায় পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রের ৪১টি কাঁঠালগাছসহ ৫৪টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাছ কাটা শুরুও হয়েছে। তবে পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে এতগুলো গাছ কেটে ফেলা নিয়ে আপত্তি করছেন পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের শিরিরচালা আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাঠের বিভিন্ন জায়গায় গাছগুলো রয়েছে। সম্প্রতি ৪১টি কাঁঠালগাছসহ ওই ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণা মাঠে থাকা একটি শিমুল, নয়টি আম ও তিনটি তালগাছ জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশিত নিলাম বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ১০টি শর্তসাপেক্ষে তারা গাছগুলো জ্বালানি কাঠ হিসেবে নিলামে বিক্রি করতে চায়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে সেখানে গাছগুলো থেকে সম্ভাব্য জ্বালানি কাঠের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। ১৬ অক্টোবর একটি স্মারকে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ইনস্টিটিউটের ভান্ডার কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র যেখানে সারা দেশে বৃক্ষরোপণের তাগিদ দিচ্ছে, সেখানে প্রায় শতবর্ষী গাছ বিক্রি করা হচ্ছে। কাঁঠাল, আম, শিমুল, তালগাছসহ মোট ৫৪টি পুরাতন ঐতিহ্য স্মৃতিবিজড়িত গাছগুলো বিক্রি করে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি অক্সিজেনের ঘাটতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে তালগাছ রোপণ করার জন্য বলা হলেও এখানে পুরোনো তালগাছ নিধন করা হচ্ছে। আমরা এমন অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিল চাই। গাছ কাটা নয়, রোপণ করে পরিবেশ সুরক্ষা করতে হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, পরমাণু কেন্দ্রের ভেতরে বিশাল মাঠ। সেখানে প্রতিবছরই বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করা হয়। এসব জমির আলসহ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে শতাধিক গাছ। এর মধ্যে বেশির ভাগই কাঁঠালগাছ। প্রতিবছরই এসব গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরে। রয়েছে বড় তালগাছ। গাছপালা ও ফাঁকা ফসলের মাঠ থাকায় পরিবেশটাও অনেক সুন্দর। আজ সকালে কয়েকজন শ্রমিক বড় আকারের একটি কাঁঠালগাছ কাটতে শুরু করে। এই গাছগুলো কেটে ফেললে এতে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হবে, তেমনি খোলা জায়গাটিও স্থাপনার জন্য সৌন্দর্য হারাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এখানে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে। ইচ্ছা করলে এসব গাছ রেখেই যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে। গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে আমাদের এলাকার পরিবেশটাও নষ্ট হয়ে যাবে।’
গাছা কাটা শুরু হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে গাছগুলো রক্ষা করতে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগও করেছেন। পরিবেশ ও বৃক্ষরোপণের নানা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের এই সময়ে গাছকে বাঁচিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা গেলেই ভালো হয়। এতে সবার জন্যই মঙ্গল।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের শিরিরচালা আঞ্চলিক কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক ফরিদ আহাম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হেড অফিস থেকে গাছগুলো বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে যাঁরা গাছগুলো কিনেছেন, তাঁরা আজ থেকে গাছগুলো কাটতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।’
এ ব্যাপারে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছ কাটার খবরটি শুনেছি। জানতে পেরেছি, এটি পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রকল্প। তারা যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তাই এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। আপনি তাদের চ্যানেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।’