বরিশাল সিটি নির্বাচনে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠে আছে বিএনপি

বরিশাল সিটি করপোরেশন
বরিশাল সিটি করপোরেশন

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও বরিশালে মেয়র প্রার্থী হবেন কামরুল আহসান ওরফে রুপণ। এ ছাড়া অন্তত ২৫টি ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে শুরু করে সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ পদধারীরাও আছেন।

এ বিষয়ে নগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক ওরফে তারিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যত দূর খবর পাচ্ছি, তাতে অনেকেই কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে নগর বিএনপির পদধারী অনেকেই আছেন।’

কামরুল আহসান মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। কামরুল বর্তমানে দলীয় কোনো পদে না থাকলেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। তিনি বরিশালের বিএনপি দলীয় প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে। আহসান হাবিব কামাল গত বছর মারা যান। তিনি বরিশাল নগর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বরিশাল পৌরসভার মেয়র ছিলেন। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৭ হাজার ১০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন আহসান হাবিব কামাল।

কামরুল আহসান

ইতিমধ্যে কামরুল আহসান নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে প্রতিদিনই মতবিনিময় সভা ও যোগাযোগ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। দু-এক দিনের মধ্যেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করব। এখন গণসংযোগ, মতবিনিময়সহ মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছি।’

দলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না, এ প্রসঙ্গে কামরুল আহসান বলেন, ‘দলের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। তবে যেহেতু দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না, তাই কেউ প্রকাশ্যে আমার নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপির ভোটার, আমার বাবার রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিনের সুনাম আমাকে ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা দেবে। মানুষের সাড়া দেখে সেটা বুঝতে পারছি।’

তবে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এই সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এরপরও যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে এমন হুঁশিয়ারি মাঠপর্যায়ে কতটা কাজে দেবে, সেটা জানতে গতকাল শনিবার দলের অন্তত ছয়জন বর্তমান ও সাবেক নেতার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, আসন্ন নির্বাচনে দলের অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। তাঁরা এখন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। এর মধ্যে এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র পদে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রার্থী না থাকলেও এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কামরুল আহসান। সে ক্ষেত্রে কামরুল আহসান বিএনপির ভোটারদের আনুকূল্য পাবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত।

এ ছাড়া নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ২৫টিতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নগর বিএনপির অন্তত দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। আছেন অন্তত দুজন বর্তমান সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

বরিশাল নগর বিএনপির কার্যালয়

প্রার্থী হতে আগ্রহী এমন চার ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় সরকারে দলীয় সিদ্ধান্ত বিবেচনা করা কঠিন। কারণ, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সে ক্ষেত্রে এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে স্থানীয় ভোটারদের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিতে হয়। না হলে তাঁরা রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়বেন। এমন ভাবনায় অনেকেই প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে সাবেক কাউন্সিলর মো. হাবিবুর রহমান ওরফে টিপুর। তিনি নগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। দেখি এখনো তো সময় আছে। আর মেয়রের পদে নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে ও মনোনয়নে। যেহেতু কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের প্রয়োজন নেই, তাই এ ক্ষেত্রে দল এতটা কঠোর হবে বলে মনে হয় না।’

তবে এ বিষয়ে বরিশাল নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না, এটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। এরপরও যদি কেউ নির্বাচন করে, তাহলে সেটা নিজ দায়িত্বে করবেন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

কাউন্সিলর পদেও দলের নেতা-কর্মীদের অনেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘না আমরা এখনো এমন তথ্য পাইনি।’

কামরুলের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে বলেন, ‘তিনি আমাদের দলের কেউ নন। তাই তিনি কী করবেন বা না করবেন, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আর এতে দলের চলমান আন্দোলন-সংগ্রামেও কোনো প্রভাব পড়বে না।’