সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন

‘আনারসে ভোট দিতে চান কেন্দ্রে আইসেন, না দিতে চাইলে ঘরে থাইকেন’

সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় একটি উঠান বৈঠক থেকে আনারস প্রতীকে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা হয়েছে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরের এক নির্বাচনী উঠান বৈঠক থেকে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় একটি উঠান বৈঠক থেকে আনারস প্রতীকে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা হয়। বাবুল ওমর ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। গতকাল শনিবার ওই উঠান বৈঠকের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ওই উঠান বৈঠকের ভিডিওতে দেখা যায়, প্রার্থী বাবুল ওমরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মঞ্চে বসে আছেন। মাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন নাসির উদ্দিনের ছেলে রাসেল উদ্দিন। ভিডিওতে রাসেল উদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে (চির কিশোরগঞ্জে) আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজনই, সে হলো আনারসের বাবুল ওমর। এ ছাড়া যত মার্কা, সব নৌকা ছিদ্র করার লাইগা। তো, দ্বিতীয় কোনো কথা চলব না। চর কিশোরগঞ্জের সব ভোট আনারস। অন্য কোনো মার্কায় কোনো ভোট পড়ব না। পড়তে পারে দু–একটা। ১০ জনের মধ্যে দুয়েকটা দুষ্টু গরু থাকে। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ঘরেই থাকেন। যদি আনারসে ভোট দিতে চান, কেন্দ্রে আইসেন, না দিতে চাইলে ঘরে থাইকেন। আপনাদের ভোটের দরকার নাই। সব ভোট আনারসের। যে কথা নাসির মেম্বার বইলা গেছে, সে কথাই শেষ, চর কিশোরগঞ্জের ভোট রিজার্ভ। দ্বিতীয় কোনো কথা, দ্বিতীয় কোনো নেতা চর কিশোরগঞ্জে জন্মায় নাই, জন্ম হইব না।’

এ বিষয়ে বাবুল ওমরের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আগামী মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

সোনারগাঁ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলার সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন ওমর (আনারস প্রতীক), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী হায়দার (দোয়াত-কলম প্রতীক)।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনারগাঁয়ে কাগজে–কলমে চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেও ভোটের মাঠে রয়েছেন মাহফুজুর রহমান কালাম ও বাবুল হোসেন ওমর। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন পাচ্ছেন বাবুল ওমর। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য মোবারক হোসেনের ছেলে এরফান হোসেনসহ আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন পাচ্ছেন মাহফুজুর রহমান।

নির্বাচন ঘিরে প্রতিদিনই সোনারগাঁয়ে হুমকির অভিযোগ উঠছে। ভোটারদের হুমকির ঘটনায় এরই মধ্যে প্রার্থী বাবুল ওমরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাকিব আল রাব্বি জানান, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দাবি
ভোটারদের হুমকি দেওয়ার পর চর কিশোরগঞ্জ কেন্দ্রে জাল ভোট ও নাশকতার শঙ্কা জানিয়ে ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজুর রহমান। গতকাল নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক সাকিব আল রাব্বির কাছে মাহফজুর রহমান লিখিত আবেদন জানান।

ওই আবেদনে মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ‘চর কিশোরগঞ্জ অত্যন্ত দুর্গম একটি এলাকা। ওই কেন্দ্রে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন করে জাল ভোট এবং নাশকতামূলক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই মধ্যে আনারস প্রতীকের সমর্থক রাসেল উদ্দিন আনারস প্রতীকে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করেছেন। ফলে ওই এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।’