পার্টটাইম কসাইয়ের কাজ করেন আবদুস সালাম। আজ দুপুরে খুলনা নগরের শেরেবাংলা রোডে
পার্টটাইম কসাইয়ের কাজ করেন আবদুস সালাম। আজ দুপুরে খুলনা নগরের শেরেবাংলা রোডে

‘পার্টটাইম’ কসাইয়ের আয়ে খুশি রাজমিস্ত্রি সালাম

আবদুস সালাম পেশায় রাজমিস্ত্রি। পাশাপাশি মাংস প্রস্তুতের কাজে বেশ ভালোমতোই হাত পাকিয়েছেন। মূল পেশার ফাঁকে সুযোগ আর অবসর মিললেই বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানে পশু জবাইসহ মাংস প্রস্তুতের কাজ করেন। সেই সঙ্গে কয়েক বছর ধরে ঈদুল আজহার দিনে দলবল নিয়ে তিনি মাংস প্রস্তুতের কাজ করছেন।

আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহার দুপুরে খুলনা নগরের শেরেবাংলা রোডে আমতলা মোড় এলাকায় কথা হয় আবদুস সালামের সঙ্গে। রাস্তার পাশে একটি ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলেন তিনি। আর তাঁর সহকারীরা ভেতরে গরুর মাংস কেটে টুকরা করছিলেন। আজ সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ওই এলাকায় দুটি গরু ও তিনটি ছাগল জবাইয়ের পর মাংস প্রস্তুত করেছে তাঁর দল।

আবদুস সালামের পৈতৃক বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলা হলেও ৫১ বছর ধরে খুলনায় বসবাস করছেন। এখন তিনি থাকেন নগরের অদূরে সাচিবুনিয়া এলাকায়। খুলনায় আসার পর ঠেলাগাড়ি ও রিকশা চালাতেন তিনি। এখন করছেন রাজমিস্ত্রির কাজ। আর সময়-সুযোগ বুঝে করেন পশু জবাই করাসহ মাংস প্রস্তুতের কাজ। সালাম বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজে প্রতিদিন ৭৫০ টাকা পাওয়া যায়। মাংসের এই কাজ পেলে রোজগারটা ভালো হয়। তবে পেশাদার কসাই হওয়ার ইচ্ছা জাগেনি কখনো।

গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সালাম সাড়ে তিন হাজার টাকার আয় করেন। এবার একটু বেশি হবে বলে আশা করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চলতি বছর পাঁচজন সহযোগী নিয়েছেন।

গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সালাম সাড়ে তিন হাজার টাকার আয় করেন। এবার একটু বেশি হবে বলে আশা করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চলতি বছর পাঁচজন সহযোগী নিয়েছেন।

মজুরি কীভাবে ঠিক করেন, জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, ‘সাধারণত পরিচিত ব্যক্তিদের কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কাজ করি। যে দামে গরু কেনা হয়েছে, ওই দামের প্রতি হাজারে ১০০ টাকা নিয়ে থাকি আমরা। এই হিসাবে গরুর দাম যদি এক লাখ টাকা হয়, তবে আমরা নিই ১০ হাজার টাকা। ছাগলের ক্ষেত্রেও ওই একই হিসাব। অনেকে এর চেয়ে বেশি নিলেও আমি তা করি না। আর চামড়া তাঁদেরই দিয়ে যাই। এগুলো আমাদের হক নয়।’

কথা বলে জানা গেল, আবদুস সালামের দল এ বছর প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কেনা একটি পশু কোরবানির কাজ করেছেন। এ হিসাবে মজুরি পাবেন ২৮ হাজার টাকার মতো। সেই টাকা ছয়জন সমানভাবে ভাগ করে নেবেন।

আমাদের তো কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কাজ শেষে কিছু মাংসও পাওয়া যায়। আর এক দিনে চার-সাড়ে চার হাজার টাকা আয় কম নয়। কলমের খোঁচায় যারা লাখ লাখ টাকা নাই করে, তাদের কথা আলাদা। আমাদের কাছে এই টাকাই বহুত।
আবদুস সালাম

আবদুস সালাম বলেন, ‘যাঁদের সহযোগী হিসেবে নিয়েছি, তাঁরাও কেউ দিনমজুর, কেউ মিস্ত্রি আবার কেউ অন্য কাজ করেন। কাজ ঠিক করা থেকে তাঁদের ডেকে নেওয়া সব আমিই করি। তবে মজুরির ভাগ সবার সমান হয়। এই দিন পেশাদার কসাইরা অনেক বেশি কাজ করে থাকেন। তবে আমরা দিনভর এ কাজ করি না; পারিও না। দুপুরের পর আর কেউ ডাকলেও যাব না। বয়স হয়েছে ৬৫। শরীরে তো কুলাতে হবে। কমবেশি যা আয় হবে, সব আল্লাহর ইচ্ছা।’

এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের তো কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কাজ শেষে কিছু মাংসও পাওয়া যায়। আর এক দিনে চার-সাড়ে চার হাজার টাকা আয় কম নয়। কলমের খোঁচায় যারা লাখ লাখ টাকা নাই করে, তাদের কথা আলাদা। আমাদের কাছে এই টাকাই বহুত।’