খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য শুরুর দিকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখে অনেকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। পদধারী কয়েকজন নেতা মনোনয়নপত্র তুললেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তবে মাঠে সক্রিয় আছেন দলটির সাবেক ও বর্তমান ছয়জন কাউন্সিলর।
যদিও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। এরপরও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসন্ন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদেও দলগতভাবে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয়। গত ২৯ এপ্রিল নির্বাহী কমিটির সভায় কোনো নেতা-কর্মী নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় খুলনা মহানগর বিএনপি। এমতাবস্থায় ‘জনপ্রিয়তা পরিমাপ নাকি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বহিষ্কার’ হওয়ার মতো উভয়সংকটে পড়েছেন পদধারী বর্তমান কাউন্সিলররা।
বিএনপি-সমর্থিত বর্তমান কাউন্সিলররা বলছেন, স্থানীয়ভাবে তাঁরা জনপ্রিয়। জনগণের চাওয়া-পাওয়ার তাগিদে তাঁরা নির্বাচন করতে চান। আবার দল নির্বাচনে না আসায় নির্বাচনে যাওয়া কতটুকু যৌক্তিক হবে, সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন তাঁরা। তবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম ওরফে মনা বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো ভাবনা নেই। তাঁরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। নেতা-কর্মীদের পরিষ্কারভাবে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এরপরও কেউ অংশ নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগ ও ৯টিতে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী জয় লাভ করেন। বাকি ১০টি ওয়ার্ডে নির্দলীয়ভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে বিএনপির ছিলেন একজন। সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে বিএনপি-সমর্থিত ছয়জন কাউন্সিলর দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বর্তমানে এক নারীসহ বিএনপির কাউন্সিলর আছেন চারজন। তাঁরা হলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হাফিজুর রহমান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশফাকুর রহমান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শমসের আলী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মাজেদা খাতুন।
বিএনপিপন্থী আমরা সাবেক কয়েকজন নারী কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তবে দলে পদ আছে এমন কোনো নেত্রী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।রোকেয়া ফারুক, মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর
দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই বর্তমান কাউন্সিলর শমসের আলী, মাজেদা খাতুন ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব কায়সার। তাঁরা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের অনুসারী। তিনজনই জনগণের প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়ে মাঠে আছেন। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগার লবীর অনুসারী ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুহা. আমান উল্লাহও এবার নির্বাচন করছেন।
এদিকে প্রায় ১৪ বছর পর মহানগরের চার থানায় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সেই সম্মেলনে সোনাডাঙ্গা থানায় আহ্বায়ক পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান। তাঁরা দুজনই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
বিএনপির নেতা আশফাকুর রহমান বলেন, ‘থানা সম্মেলন ও কাউন্সিলর দুটোতেই প্রার্থী থাকব। দল তো না যাওয়ার জন্য বলছে। তবে শেষ পর্যন্ত দল অনেক সিদ্ধান্ত বদলায়। জনগণের চাওয়াকে উপেক্ষা করা কঠিন। মনোনয়ন জমাও দেব। দেখা যাক কী হয়।’ তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। সরকারি দল বাধা দিলে সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়, তা আরও স্পষ্ট হবে।
টানা দুবারের কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান বলেন, ‘হাতে সময় কম। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। থানা সম্মেলন ও কাউন্সিলর প্রার্থী দুটোতেই প্রস্তুতি আছে। তবে শেষ পর্যন্ত যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।’
তবে মহানগর থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের বর্তমান নেতারা দলীয় সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাঁরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে রাজি নন। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি রোকেয়া ফারুক বলেন, ‘বিএনপিপন্থী আমরা সাবেক কয়েকজন নারী কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তবে দলে পদ আছে এমন কোনো নেত্রী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।’
মহানগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আনছার আলী বলেন, ‘মনোনয়ন কিনেছি। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চাই না।’ ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান বিশ্বাস নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না বলে জানান।
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা এখন আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন না, আগে বিএনপির রাজনীতি করলেও এখন কোনো পদে নেই; তাঁদের বিরুদ্ধে তো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় নেই। তবে পদপদবি আছে, এমনকি প্রাথমিক সদস্যপদ থাকার পর নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’