শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া মাসব্যাপী মেলার আয়োজন বন্ধ করা হয়েছে। মেলার মাঠ থেকে সব ধরনের মালামাল সরাতে বলা হয়েছে আয়োজকদের। আজ বুধবার সকালে এ তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহিম।
অন্যদিকে মেলার আয়োজন করতে ইতিমধ্যেই ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। সে জন্য তাঁরা মালামাল সরাতে নারাজ। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের একক সিদ্ধান্তে এ স্টেডিয়ামে মেলার কাজ শুরু করেছিলেন তাঁরা। এখন বড় অঙ্কের এই ক্ষতিপূরণ তাঁদের কে দেবে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন আয়োজকেরা।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মণিপুরি তাঁতশিল্প জামদানি ও বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে মেলার জন্য স্টেডিয়ামটি ভাড়া দেওয়া হয়। মাসব্যাপী এ মেলার জন্য অন্তত দুই মাস খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়ে জানতেন না সংস্থার সদস্যরা। ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ একক সিদ্ধান্তে মেলা বসানোর জন্য স্টেডিয়াম ভাড়া দেন। ৩১ জানুয়ারি কিংবা ১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এরপর আজ বুধবার ‘শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে খেলা বন্ধ রেখে মেলার আয়োজন, মাঠ নষ্ট’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলোতে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষে মেলার দায়িত্ব সমন্বয়ক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেলার আয়োজন বন্ধ রাখতে ও মালামাল সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন।
শরীয়তপুর শহরের ধানুকা এলাকায় ১৯৭৮ সালে ৬ একর জমির ওপর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফের নামে জেলা স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। ১২ হাজার আসনবিশিষ্ট ওই স্টেডিয়ামে বছরজুড়ে ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৬ ও অনূর্ধ্ব ১৮ দলের খেলোয়াড়দের জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন চলে এ মাঠে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, এ মুহূর্তে স্টেডিয়ামটি ব্যবহারের উপযোগী নয়। তাই শরীয়তপুরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের মাঠে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের অনুশীলন, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন খেলার বাছাই চলছে।
শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক এককভাবে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা শরীয়তপুরের মানুষ মানতে পারেননি। তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদ করায় ও গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় জেলা প্রশাসন থেকে ক্রীড়া সংস্থা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।
‘প্রাণের শরীয়তপুর’ নামের একটি সংগঠনের সমন্বয়ক রিয়াদ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলা বন্ধ করে মেলার আয়োজন করায় আমরা হতভম্ব হয়েছি। পুরো স্টেডিয়ামের খেলার মাঠ তছনছ করা হয়েছে। এ মাঠ সংস্কার কে করবে? জনগণের টাকা দিয়ে জেলা প্রশাসক এর সংস্কার করবেন? তা তো হতে পারে না।’
হঠাৎ মেলার আয়োজন বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আয়োজক কমিটির সদস্য এবং মণিপুরি তাঁত জামদানি ও বেনারসি ফাউন্ডেশনের পরিচালক ওসমান গণি। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলার আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি দেওয়ার পর ১২ জানুয়ারি প্যাভিলিয়ন নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজসহ বিভিন্ন স্থাপনা বসানোর কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে আমাদের ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মেলা চালাতে পারলে আয় হতো, সেই আয় দিয়ে স্টেডিয়ামের ক্ষতি সংস্কার করতাম। কিন্তু হঠাৎ মেলা বন্ধ করার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসন। এখন মালামাল অপসারণ করতে আরও ১০ লাখ টাকা লাগবে। আমাদের এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে? আমরা ওই টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত মালামাল সরাতে পারছি না।’
ওসমান গণি আরও বলেন, ‘আর যাঁরা বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়েছেন, তাঁরাও অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাঁরা দোকান চালানোর জন্য এক হাজারের ওপরে কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁরাই–বা এখন কী করবেন? জেলা প্রশাসকের এমন একটি ভুল সিদ্ধান্তের দায় কে নেবে?’
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি। খুদে বার্তা পাঠালে সেটির জবাবও দেননি। তবে জেলা প্রশাসকের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মু. আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুলিশ প্রতিবেদন পেয়ে মেলার মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলাম। আয়োজকেরা এভাবে মাঠ ক্ষতি করবেন, তা বুঝতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ওঠায় মেলার আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। মাঠ থেকে মেলার মালামাল অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’