লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে রাস্তার পাশের জমির ঘাস কাটা নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর গাড়িচালকের সঙ্গে তর্ক করায় এক কৃষককে তিন ঘণ্টা থানায় নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ফুল কমল (৪০) নামের ওই কৃষককে কালীগঞ্জ থানায় আটকে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী কৃষক ফুল কমলের বাড়ি কালীগঞ্জের দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতা। পাশের কাশিরাম গ্রামে বাড়ি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের। তিনি লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য। তাঁরা গাড়িচালকের নাম আতিয়ার রহমান (৩৭)।
কালীগঞ্জের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ও কাশিরাম গ্রামের বাসিন্দা এস তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর এ ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, গাড়িচালক আতিয়ার রহমান প্রতিদিনের মতো শুক্রবার প্রাতর্ভ্রমণে বের হন। শ্রীখাতা মৌজায় প্রধান সড়কে পৌঁছে দেখেন কয়েকজন গরিব কৃষক রাস্তাসংলগ্ন জমির পাশের ঘাস কাটছে গরুর জন্য। আতিয়ার তখন ঘাস কাটতে নিষেধ করেন। তখন ফুল কমল উত্তর দেন, ‘আমরা আপার (এস তাবাসসুম রায়হান) জমির ঘাস কাটতেছি, আপনার সমস্যা কী, আপনি নিষেধ করার কে?’ আতিয়ার তখন ফুল কমলের নাম–ঠিকানা জানতে চান। এরপর আতিয়ার বলেন, ‘আমি কে, এটা বিকেলের মধ্যে জানতে পারবি।’
তাবাসসুম রায়হান স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনার পর রাত ৯টায় কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামানের নির্দেশে শ্রীখাতা গ্রামের বাড়ি থেকে ফুল কমলকে ধরে নিয়ে যান স্থানীয় চৌকিদার। এরপর তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়িচালক আতিয়ারের কাছে মাফ চাইতে বলেন এসআই নুরুজ্জামান। রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফুল কমলকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ফুল কমল (৩৫) শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানায় আটক থাকার সময় আমাকে এসআই নুরুজ্জামান হুমকি দেন, কানে থাপ্পড় দেন আর বলেন, ‘‘থানা থেকে গিয়ে মন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করে হাত–পা ধরে ক্ষমা চাবি, নইলে জেলে পচে মরবি।’’ আমি এখন ভয়ে আছি, কখন যে কী হয়, গরিব মানুষ।’
ফুল কমলকে হুমকি দেওয়া বা খারাপ আচরণ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কালীগঞ্জ থানার এসআই মো. নুরুজ্জামান। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের গাড়ির ড্রাইভার আতিয়ার রহমানের মৌখিক অভিযোগে ফুল কমলকে স্থানীয় চৌকিদার দিয়ে গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে থানায় ডেকে আনা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে গাড়িচালক আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তার ধারের ঘাস কাটতে দেখে আমি তাঁদের মানা করি, ওরা কর্ণপাত করেনি। এরপর আমি থানায় ফোন করেছি।’
রাস্তাসংলগ্ন ওই জমি তাঁর নিজের বলে জানিয়েছেন এস তাবাসসুম রায়হান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার গরিব লোক সেখান থেকে গরুর জন্য ঘাস কেটে নিয়ে যায়। এতে আমার সমস্যা নেই। মন্ত্রীর গাড়িচালককে ওই দায়িত্ব কে দিয়েছিলেন?’
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ফুল কমলকে থানায় নিয়ে আসার পর ঘটনার বিষয়ে শুনে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।