বরিশাল সিটি নির্বাচন

সংঘাতে রূপ নিচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভেদ

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর তিন কর্মীকে মারধরের পর ছাত্রলীগ নেতা রইসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নগর আওয়ামী লীগ।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের পর দলের ভেতরে বিভেদ ক্রমেই সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে যেসব নেতা–কর্মী মাঠে নামতে চাইছেন, তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো ও মারধর করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সমর্থিত নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যায় আবুল খায়ের আবদুল্লাহর তিন কর্মীকে মারধর করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ ওঠে নগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ওরফে মান্নার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে রইসকে রোববার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর গতকাল সোমবার রইসের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেন। এতে সাদিক আবদুল্লাহর কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে খায়ের আবদুল্লাহর দ্বন্দ্ব–সংঘাত আরও প্রকাশ্যে এল।

গতকাল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষের তিনজন নেতার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর দোহাই দিয়ে মহানগর ও জেলা কমিটির পদধারী নেতারা সময়ক্ষেপণ করছেন। প্রার্থীর পক্ষে তাঁরা নেই—এমন একটি বার্তা প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করা হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মীর আমিন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর অনুগত নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীকে অঘোষিত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে এমনটা করছেন। শুধু তা–ই নয়, আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে যেসব নেতা-কর্মী মাঠে নামতে চাইছেন, তাঁদেরও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে নামতে দেওয়া হচ্ছে না।

সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যায় আবুল খায়ের আবদুল্লাহর তিন কর্মীকে মারধর করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ ওঠে নগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ওরফে মান্নার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে রইসকে রোববার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর গতকাল সোমবার রইসের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেন। এতে সাদিক আবদুল্লাহর কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে খায়ের আবদুল্লাহর দ্বন্দ্ব–সংঘাত আরও প্রকাশ্যে এল।

আবুল খায়েরের পক্ষের এ নেতাদের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় গত কয়েক দিনের বেশ কয়েকটি ঘটনায়। গত রোববার সন্ধ্যায় নগরের কাউনিয়া বাঁশবাজার এলাকায় খায়ের আবদুল্লাহর তিন কর্মীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তাঁদের পিটিয়ে আহত করার পর তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ হামলার ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা দায়ী করেছেন নগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদকে। এ ঘটনায় মামলার পর রইস ও তাঁর নয়জন সহযোগীকে রোববার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে ৬ মে রাতে রইস ও তাঁর সহযোগীরা কাউনিয়ার জানকী সিংহ রোডে ধারালো অস্ত্র ও পিস্তল ঠেকিয়ে মো. সোহাগ, সজীবুর রহমান ও সোহেল হাওলাদার নামের তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে নৌকার পক্ষে মাঠে নামায় হুমকি দেন। এ ঘটনায় কাউনিয়া থানায় একটি জিডি করেন ছাত্রলীগ কর্মী সোহাগ। ৬ মে সন্ধ্যায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক ও পঞ্চম বর্ষের অপর এক শিক্ষার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খায়ের আবদুল্লাহকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর ছবি ফেসবুকে দিলে রইস আহম্মেদের ভাই গণপূর্তের ঠিকাদার রিসাদ আহমেদ ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুজনকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত এবং হলের সিট বাতিল করার হুমকি দেন। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁরা।

এদিকে গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ বরিশাল মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে।

রইস আহম্মেদ মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তাঁর গ্রেপ্তারের পর মহানগর আওয়ামী লীগ তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন ডাকা নিয়েও খায়ের আবদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, পরিকল্পিতভাবে একটি ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। যে ঘটনায় পুলিশ রইস আহম্মেদকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে, সেই ঘটনাস্থলের দুই কিলোমিটারের মধ্যেও রইস আহম্মেদ ছিলেন না।

এ সংবাদ সম্মেলন দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের একাংশের অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ কি না, জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আফজালুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, নৌকার কর্মীদের যারা আঘাত করল, আহত করল, পিস্তল নিয়ে হুমকি দিল, তাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সাফাই গাওয়াটা দলীয় পদের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।

তবে সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি এবং সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে দলটির জাতীয় কমিটির সদস্য গোলাম আব্বাস চৌধুরী। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এই নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তিন কর্মীর আহত হওয়া এবং রইস আহম্মেদের গ্রেপ্তার—এসবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কর্মী পর্যায়ে কিছুটা অনৈক্য থাকলেও মূল দলে অনৈক্য নেই। তারপরও বিষয়গুলো অনাকাঙ্ক্ষিত হওয়ায় তাঁরা বিব্রত। এ জন্য উভয় পক্ষেরই উচিত বিভেদ নয়, ধৈর্য ধারণ করা, সহিষ্ণুতা দেখানো।