নদীতীরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে নৌ অ্যাম্বুলেন্স 

চরাঞ্চলের রোগীদের বহন করার জন্য ২০১৯ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয়। তিন বছর পরও এটি চালু করা হয়নি।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। নদীর তীরে পড়ে থেকে তা নষ্ট হচ্ছে

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মানুষের নৌযান ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই জনপদের মানুষকে দ্রুত ও জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য তিন বছর আগে একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু চালক ও জ্বালানি তেলের খরচ না দেওয়ায় ২৫ লাখ টাকার এই নৌ অ্যাম্বুলেন্স নদীতীরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এটি চালু না হওয়ায় ওই তিন ইউনিয়নের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

ঘড়িসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রব হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ অসুস্থ হলে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে হাসপাতালে আনতে হয়। অনেক সময় দ্রুত চিকিৎসা-সেবা প্রয়োজন হয়, কিন্তু নৌপথের বিকল্প না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চরাঞ্চলের মানুষের কথা বিবেচনা করে দ্রুতগতির নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি উপহার দিয়েছেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের অযত্ন ও অবহেলায় তা আজ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

চরআত্রার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন (৬৫) গত নভেম্বরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্স পেতে তাঁর স্বজনেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অচল অ্যাম্বুলেন্সটি আর পাঠানো যায়নি। পরে ট্রলারে করে তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনতে হয়।

দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা অসুস্থ হওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্স পেতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করি। কিন্তু নৌ অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট থাকায় তা আর পাইনি। অনেক কষ্টে ট্রলারে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাই। হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় বাবার অবস্থা খারাপের দিকে যায়। তখন তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়ার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে চরআত্রা, নওপাড়া ও ঘড়িসার ইউনিয়নের আংশিক পদ্মা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। ওই এলাকার মানুষকে নৌপথে ট্রলারে করে যাতায়াত করতে হয়। চরাঞ্চল থেকে রোগী আনা-নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি বরাদ্দ পাওয়ার পর তা আর ব্যবহার করা হয়নি। এটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চার কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরের নড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকায় কীর্তিনাশা নদীর তীরে রাখা হয়েছে। স্পিডবোটের মধ্যে স্থাপন করা এই নৌ অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সিলিন্ডার, শয্যা ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক শামীমের চেষ্টায় নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু পরে তা চালানোর চালক ও তেল খরচ পাওয়া যায়নি। এর ফলে ওই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এখন সেটির চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুল জমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতগতির স্পিডবোট দিয়ে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি বানানো। অ্যাম্বুলেন্সটি চালানোর জন্য কোনো চালক দেওয়া হয়নি, কোনো তেলের বরাদ্দ নেই। তাই সেটি রোগীদের বহন করার জন্য ব্যবহার করা যায়নি। গত মাসে স্থানীয়ভাবে একজন চালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন এটি চালানোর জন্য জ্বালানি তেল বরাদ্দে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।