কুমিল্লা-৯ (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা গোলাম সরওয়ার মজুমদারের ওপর হামলার ঘটনা সাজানো বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, প্রতিপক্ষকে বিতর্কিত করতে গোলাম সরওয়ার এমন নাটক সাজান। কথিত হামলাকারীরা সবাই ভাড়াটে। ঘটনার আগে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে হামলার সময় কার কার নাম বলতে হবে, সেটি তিনি শিখিয়ে দেন।
কথিত হামলাকারী পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আজ শনিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান এসব তথ্য জানান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কামরান হোসেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেস বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লা নগরের ছোটরা মফিজাবাদ কলোনি এলাকার মো. সুমন, মো. সবির, মো. সবুজ, ইকবাল হোসেন ও মাসুদ রানা। গতকাল শুক্রবার রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, ঘটনার পরিকল্পনাকারী গোলাম সরওয়ার ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।
এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কার্যালয়–সংলগ্ন এলাকায় তাঁর ওপর হামলা হয় বলে গোলাম সরওয়ার একটি ভিডিওতে ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ বলছে, ওই ভিডিওটি সাজানো। গোলাম সরওয়ার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ঘটনার দুদিন আগে সরওয়ার মফিজাবাদ কলোনিতে কথিত হামলাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে পুরো নাটকটি সাজান। পরিকল্পনা অনুযায়ী সরওয়ার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম তুলতে যাবেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁর ওপর হামলা হবে এবং কয়েকজন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে মনোনয়ন ফরম ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তিনি হামলাকারীদের এ-ও বলে দেন, যেন তাঁকে আস্তে মারা হয়। ঘটনার ভিডিও করার জন্য মনোহরগঞ্জ থেকে সঙ্গে করে দুজন নিয়ে আসেন তিনি। গ্রেপ্তার পাঁচজনই একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। ঘটনার পরিকল্পনা যেখানে করা হয়, সেই চা–দোকানিকে পুলিশ পেয়েছে। তিনি ঘটনার সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘সরওয়ারের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওই আসনে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে বিতর্কিত করা। আমরা গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সরওয়ারকেও আটকের চেষ্টা চলছে। তাঁকে আটক করার পর পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, বা তাঁর উদ্দেশ্য জানতে পারব। আমরা ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে গোলাম সরওয়ার মজুমদার গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগ বিষয়ে তাঁর মুঠোফোনে আজ সন্ধ্যায় একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।