ফাঁকা বিল। বিলের মধ্যে খেত। খেতের বাঁশের মাচায় ঝুলছে আঙুর। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা সবুজ আঙুর দূর থেকে পথচারীদের নজর কাড়ছে। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সাহারাত আলী (৬৩) মিষ্টি জাতের এই আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন। শখের বশে চাষ শুরু করার মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি ছয় মণ আঙুর বিক্রি করেছেন।
সাহারাত পরীক্ষামূলকভাবে ছয় শতাংশ জমিতে আঙুর চাষ করে সফল হন। ইউটিউব দেখে এক বছর ধরে তিনি আঙুর চাষ করছেন। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পরিকল্পনা নিয়ে ১৭ শতাংশ জমি প্রস্তুত করছেন। মিষ্টি এসব আঙুরের চারা বিক্রি করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন তাঁর আঙুরখেত দেখতে ও চারা কিনতে। বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে আছে ভারতীয় চয়ন জাতের প্রায় দেড় শ চারা। আরও দেড় শ চারা তিনি তৈরি করছেন।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার যশোর-চাকলা সড়কের পাশে কাঁঠালতলা বাজার। বাজার এলাকায় যশোর-চাকলা সড়ক থেকে বেরিয়ে একটি সরু আঁকাবাঁকা পাকা সড়ক পশ্চিম দিকে চলে গেছে। সড়কটি ধরে এক কিলোমিটার এগোলে ময়নার বিল।
সম্প্রতি ময়নার বিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের ফসল ঘরে তোলা হয়েছে। বিলটি এখন ফাঁকা। বিলের মধ্যে মরূদ্যানের মতো একটি বাগান। খেতের চারপাশ গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা। খেত জুড়ে উঁচু করে বাঁশের বড় মাচা তৈরি করা হয়েছে। মাচার চারপাশ ও ওপরে নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। মাচার নিচের দিকে সবুজ রঙের কাঁচা-পাকা আঙুর থোকায় থোকায় ঝুলছে। মাচার নিচে মাটিতে পেয়ারা ও কমলাগাছ। কিছুটা ব্যবধানে মরিচ, পুঁইশাক, মানকচু ও মেটে আলুগাছ। খেতে আঙুরের পরিচর্যার কাজ করছিলেন সাহারাত নিজেই।
খুলনার সরকারি বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবায়ের হোসেন এই আঙুরের বাগান দেখতে এসেছেন। সঙ্গে তাঁর এক সহকর্মী। তিনি বলেন, ‘মাঠের মধ্যে মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে এত সুন্দর বিদেশি ফল! এই আঙুর অনেক মিষ্টি। তবে আঙুরে দুই থেকে তিনটি করে বিচি আছে।’
কৃষি উদ্যোক্তা সাহারাত বলেন, তিনি লেখাপড়া জানেন না, কিন্তু ছোটবেলা থেকে আঙুর চাষের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। এক বছর আগে তিনি ইউটিউবে আঙুর চাষ দেখেন। এরপর তিনি আঙুর চাষে আগ্রহী হন। আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য না জেনে শুধু ইউটিউব দেখে শখের বশে আঙুর চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
গত বছর বৈশাখ মাসে ঝিনাইদহের মহেশপুরের একটি নার্সারি থেকে ৪০০ টাকা করে ২০টি ভারতীয় মিষ্টি জাতের চারা এনে ছয় শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। জমি প্রস্তুত, চারা কেনা ও মাচা তৈরি করতে সব মিলিয়ে তাঁর ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। চারা রোপণের আট মাসের মাথায় ফলন আসে। পাঁচ কেজির মতো আঙুর ধরে ও ভালোই মিষ্টি হয়। এক বছরের মাথায় এখন ওই গাছ থেকে তিনি প্রায় ছয় মণ আঙুর পেয়েছেন। গাছে আরও এক থেকে দেড় মণের মতো আঙুর আছে। নতুন করে আবার গাছে আঙুর ধরছে। প্রতি কেজি আঙুর তিনি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।
সাহারাতের খেতে এখন শুধু চয়ন জাতের আঙুর আছে। আঙুর চাষের জন্য আরও যে ১৭ শতাংশ জমি প্রস্তুত করেছেন, ওই জমিতে তিনি বায়কুনুর, অ্যাকুলো, ব্ল্যাকম্যাজিক ও ডিকসন জাতের আঙুর চাষ করতে চান।
আঙুরের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমিতে মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন সাহারাত। তাঁর মিশ্র ফলের বাগানে আছে ড্রাগন, কমলা, পেয়ারা, চায়না কমলা, আম ও কলা। এ পর্যন্ত তিনি ২০০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি ড্রাগন বিক্রি করেছেন।
সাহারাত আলীর আঙুর চাষের খবর শুনে স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজন এসেছেন। চোখে দেখার পাশাপাশি চেখেও দেখেছেন। মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, ‘সাহারাত আলীর আঙুর খুবই মিষ্টি ও রসালো। আঙুর চাষের পরিধি বাড়ানোর যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন, সেখানে সফল হলে কৃষকদের নিয়ে আঙুর চাষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।’