বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে ছাত্রলীগ নেতা তাকবির ইসলাম হত্যাকারীদের প্রশ্রয়দাতা ও ‘খুনির দোসর’ অভিহিত করে ওই কমিটি দ্রুত বিলুপ্তের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদবঞ্চিত নেতারা ছাড়াও কর্মসূচিতে বগুড়া শহর ও সদর উপজেলা কমিটি, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ এবং বিভিন্ন উপজেলা ও কলেজ ইউনিটের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
সোমবার দুপুরের দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন নিহত তাকবিরের বাবা জহুরুল ইসলাম ও মা আফরোজা বেগম। মানববন্ধন থেকে স্লোগান দেওয়া হয় ‘অবৈধ কমিটি মানি না, মানব না।’
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওবাইদুল্লাহ সরকার। শাজাহানপুর উপজেলার সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সরকারি শাহ সুলতান কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাব্বী, বগুড়া শহর শাখার সভাপতি সুজিত কুমার দাস, নতুন কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া মিনহাজুল ইসলাম, গাবতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির নেতা সিদ্ধার্থ কুমার দাস, ছাত্রলীগ নেতা এস এম আরিফুজ্জামান, নুর মোহাম্মদ, রাকিব হাসান, মিনহাজুল ইসলাম, হাসান হাবিব, ইমরান হোসেন, মিল্লাত হোসেন, মাহমুদুল বারী প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন নিহত তাকবিরের বাবা জহুরুল ইসলাম ও মা আফরোজা বেগম।
মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেতে হলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অথচ অনৈতিকভাবে ঘোষিত কমিটিতে অন্য জেলার বাসিন্দারাও পদ পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ব্যক্তিকে জেলা ছাত্রলীগের কোনো মিছিল-মিটিংয়ে কেউ কোনো দিন দেখেননি। কমিটি ঘোষণার আগে জেলা ছাত্রলীগের কোনো কর্মকাণ্ডে, আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো দিনই তাঁকে দেখা যায়নি। বগুড়ার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রও নন তিনি। কমিটিতে মাদক কারবারি, মাদকসেবী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় ইন্ধনদাতাসহ বিতর্কিত অনেককেই পদ দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবির ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ ও তাঁর সহযোগীদের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। অথচ সাতমাথায় মুজিব মঞ্চে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে অভিযুক্ত আবদুর রউফ সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গলায় মামলা পরিয়ে দিয়েছেন। এখন রউফকে ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছায়াসঙ্গী হিসেবে দেখা যাচ্ছে। খুনিদের দোসর বিতর্কিত এ কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে হবে।
৭ নভেম্বর বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্মেলন ছাড়াই সাত বছর পর ঘোষিত এ কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের নাম আছে। কমিটি ঘোষণার পরপরই শহরের টেম্পল সড়কে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হন পদবঞ্চিত ও পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা। ওই ভবনে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সব সংগঠনের কার্যালয়। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ওই ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।