প্রবাসে থাকাকালে টাকা ধার দিয়েছিলেন। পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে টালবাহানা করছিলেন এক নারী। ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ের প্রলোভন দেখান এক যুবক। পরে তাঁকে ডেকে এনে হত্যা করা হয়। ওই নারীর নাম ফাহিমা বেগম (৪১)। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর গ্রামে। ফাহিমার বাবার নাম সেকেন ফকীর। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. আবদুর রহিম মণ্ডল (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রহিমের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার জাগিরকয়া গ্রামে।
আজ বুধবার রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রেজাউল করিম। ৫ অক্টোবর ফাহিমা বেগমের লাশ রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কাওয়াখোলা গ্রামে একটি ধানখেত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ফাহিমা বেগমের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে বুধবার দুপুরে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে এএসপি রেজাউল করিম বলেন, ফাহিমা ও অভিযুক্ত রহিম মণ্ডল কাতারে থাকতেন। বছর তিনেক আগে তাঁরা দেশে আসেন। কাতার থাকাকালে আবদুর রহিমের কাছ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ধার নেন ফাহিমা। একটি ঝামেলার কারণে রহিম দেশে চলে আসতে বাধ্য হন। তখনো ফাহিমা কাতারে ছিলেন। পরে করোনার সময় ফাহিমাও দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পরও ফাহিমা ধারের টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না। টাকা চাইলে নানা রকম টালবাহানা করতেন।
একদিন টাকা আনতে রহিম ভাঙ্গায় যান। কিন্তু সেখানে ফাহিমা আগে থেকেই কয়েকজন সন্ত্রাসীকে দিয়ে তাঁকে (রহিম) শায়েস্তা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বুঝতে পেরে বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। এ ঘটনায় ফাহিমার ওপর ক্ষুব্ধ হন আবদুর রহিম। তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফাহিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখান। বিয়ে করলে পাওনা টাকা ফেরত দিতে হবে না শর্তে ফাহিমা রাজি হন।
এএসপি রেজাউল করিম বলেন, রহিমকে বিয়ে করার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর ফাহিমা বাড়ি থেকে বের হন। ফাহিমাকে ভাঙ্গা থেকে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। ওই দিন রাত ৯টার দিকে ফাহিমা মৃগীবাজারে আসেন। এরপর তাঁরা (ফাহিমা ও রহিম) হাঁটতে থাকেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পেছন থেকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ফাহিমাকে হত্যা করেন রহিম। এরপর তাঁর লাশ পাশের ধানখেতে এনে ফেলে রাখেন। ৫ অক্টোবর ধানখেতে নারীর লাশ দেখতে পান স্থানীয় মানুষেরা। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ৭ অক্টোবর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কালুখালী থানায় মামলা করেন তিনি। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত মঙ্গলবার আবদুর রহিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এএসপি রেজাউল করিম বলেন, ‘লাশ শনাক্ত করার জন্য আমরা বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করতে থাকি। কয়েকজনকে সন্দেহ করি। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে শেষ পর্যন্ত আমরা আসামি আবদুর রহিমকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তাঁর ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করেও বিষয়টি নিশ্চিত হই।’ আবদুর রহিম পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
নিহতের বাবা সেকেন ফকীর বলেন, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে মেয়ের সঙ্গে আমিও বাড়ি থেকে বের হই। আমরা বাজারেও গিয়েছিলাম। বাজার থেকে আমি বাড়িতে চলে আসি। আমার মেয়ে বাড়িতে ফেরেনি। প্রথমে তার ফোন খোলা ছিল। পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করা হয়। কিন্তু কোথায়ও তাকে পাওয়া যায়নি। ১৪ দিন পর আমার মেয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। আমার মেয়ের খুনির বিচার চাই।’
নিহত ফাহিমারের মেয়ে মাকসুদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ অক্টোবর সন্ধ্যার কিছু সময় আগে মায়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। আমি পারিবারিক একটি বিষয়ে তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কথা শেষ না করেই মা ফোন রেখে দেয়। এর পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম। আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’
বুধবার এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস) মুকিত সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা, কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।