বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের হাতে সহায়তা তুলে দিলেন আটটি জনজাতির প্রতিনিধিরা

নিজেদের সঞ্চয়ের টাকা ও চাল বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় তুলে দিচ্ছেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা। বুধবার বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সাঁওতাল পল্লিতে
ছবি: প্রথম আলো

‘আলে অঙ্কুয়া দুখলে বুঝেওকাদা’ অর্থাৎ ‘আমরা ওদের দুঃখটা বুঝেছি’। বন্যাদুর্গতদের কষ্ট দেখে সিলভিয়া মুরমু কথাগুলো বলেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাদমা ফুলবাড়ী সাঁওতাল পল্লির এই নারীর মতো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অনেকে তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা ও চাল নিয়ে বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার মাহালী, ওঁরাও, সাঁওতাল, পাহাড়িয়া, মুন্ডা, গড়েৎ, রাই ও রাজোয়াড় জনজাতির লোকজন বন্যার্তদের জন্য তাঁদের সঞ্চয় থেকে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা, ৩২ মণ চাল প্রথম আলো ট্রাস্টকে হস্তান্তর করেছেন। আজ বুধবার বিকেলে উপজেলার ঋষিকুল ইউনিয়নের কাদমা ফুলবাড়ী সাঁওতাল পল্লিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই গ্রামের মহেশ মাডির বাড়ির আঙিনায় প্রথম আলো ট্রাস্টের কাছে তাঁরা নগদ টাকা ও চাল হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে প্রথম আলো রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক উৎসব সরকার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাহিদ হাসান, সদস্য নিশাত তাসনিম, দেবযানী বিশ্বাস, কাজী হিমেল উপস্থিত ছিলেন।

সাঁওতাল নারী সিলভিয়া মুরমু বলেন, ‘আমরা একসময় ভাতের কষ্টে অনেক ভুগেছি। এক মণ ধান নিয়ে মহাজনকে তিন মণ ফেরত দিতে হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা “রক্ষা গোলা গ্রাম সমাজ সংগঠন” গড়ে তুলেছি। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর ভলান্টারি অর্গানাইজেশন (সিসিবিভিও) আমাদের এই মডেল তৈরি করে দিয়েছে। এই সংগঠনের মাধ্যমে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ জন্যই আজ দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সাহস করেছি।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা। বুধবার বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সাঁওতাল পল্লিতে

রক্ষা গোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সরল এক্কা বলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ৫০টি গ্রামে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের বাস। তাঁরা ৫০টি গ্রামেই ৫০টি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে অল্প অল্প করে চাল ও নগদ টাকা সংগ্রহ করে তাঁরা ৩২ মণ চাল এবং নগদ সাড়ে ১৬ হাজার টাকা বন্যার্তদের জন্য জোগাড় করেছেন। তাঁরা নিজেরা বন্যাদুর্গত এলাকায় যেতে পারছেন না। তাই প্রথম আলো ট্রাস্টের মাধ্যমে এই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক উৎসব সরকার। তিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এই উদ্যোগের জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান। তিনি তাঁদের এই ত্রাণসামগ্রী প্রথম আলোর মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেন। সরাসরি রাজশাহী থেকে চাল নিয়ে গিয়ে দুর্গত এলাকায় বিতরণ করা কঠিন। সে জন্য তিনি চাল বিক্রি করে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। পরে চাল বিক্রি করে নগদ টাকা দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকা প্রথম আলো ট্রাস্টের জন্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সিসিবিভিওর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী অফিস ইনচার্জ নিরাবুল ইসলাম, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রক্ষা গোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন রঘুনাথ পাহাড়িয়া, বাপ্পি মাড্ডি, সুধীর সরেন, সিলভিয়া মুরমু, রেজিনা মাড্ডি, সৃষ্টি টুডু, অঞ্জলি হেমরম, দুলালী হেমরম, বিজয় মুরমু, প্রশান্ত মার্ডি, জাস্টিন মুরমু, বিউটি তিরকি, স্বপন হাঁসদা, রুবেল মুরমু প্রমুখ।