বুড়িগঙ্গা প্রথম (পোস্তগোলা) সেতুর সংস্কারকাজের জন্য সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রেখেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এতে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় (বাবুবাজার) সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে নাজিরেরবাগ এলাকা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বাবুবাজার সেতুর ওপরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে যানবাহন। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে যান চলাচল।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাবুবাজার সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) সংযোগ সড়ক (কদমতলী থেকে নাজিরেরবাগ) এবং সেতুর ওপর কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কয়েক শ যানবাহন স্থবির হয়ে আছে। এ যানজট প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে অপেক্ষার পর হাজার হাজার নারী-পুরুষ গাড়ি থেকে নেমে কাঁধে ও হাতে ভারী ব্যাগ বহন করে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন।
গুলিস্তানগামী সোহাগ পরিবহন বাসের যাত্রী ইউসুফ মিয়া বলেন, কেরানীগঞ্জের নাজিরেরবাগ এলাকা থেকে কদমতলী পর্যন্ত আসতে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লেগেছে। অথচ স্বাভাবিকভাবে ওই পর্যন্ত যেতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট লাগে। এরপরও সেতুতে যানজটের যে অবস্থা, গুলিস্তান যেতে আরও কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। তাই হেঁটে গুলিস্তানের উদ্দেশে যাচ্ছেন।
মাওয়া থেকে আসা বসুমতি বাসের যাত্রী এজাজ হোসেন বলেন, ‘আমার খালা অসুস্থ। তাঁকে দেখতে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে যাব। মাওয়া থেকে কেরানীগঞ্জের নাজিরেরবাগ এলাকায় আসতে ৩০ মিনিট লেগেছে। কিন্তু নাজিরেরবাগ থেকে কদমতলীর লায়ন মার্কেট পর্যন্ত আসতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। এরপরও থেমে থেমে বাস চলছে। দীর্ঘক্ষণ পর কিছু পথ যাওয়ার পর আবারও বাস বন্ধ হয়ে থাকে। এতে আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
কাউখালী এলাকা থেকে আসা হা-মীম পরিবহনের চালক সুরুজ মিয়া বলেন, ‘বেলা একটার দিকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল এলাকায় এসেছি। সেখান থেকে বাবুবাজার সেতু পর্যন্ত আসতে দেড় ঘণ্টা লেগেছে।’
বুড়িগঙ্গা প্রথম (পোস্তগোলা) সেতুতে গতকাল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সকাল থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ হেঁটে সেতু পারাপার হচ্ছেন। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মাথায় মালামাল নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন তাঁরা।
হাসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস আলী বলেন, ‘আমি যাত্রাবাড়ী যাব। পোস্তগোলা সেতুতে এসে দেখি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। জরুরি কাজ থাকায় হেঁটে সেতু পার হতে হয়েছে।’
রাজেন্দ্রপুর এলাকার গৃহবধূ হাসনা বেগম বলেন, রাজেন্দ্রপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় হাসনাবাদ পর্যন্ত এসে দেখেন, সেতুতে গাড়ি চলাচল বন্ধ। পরে চালকের পরামর্শে কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ ঘাট থেকে খেয়ায় চড়ে পোস্তগোলা শ্মশানঘাট পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গতকাল মধ্যরাত থেকে পোস্তগোলা সেতুর ওজন ধারণক্ষমতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আশা করছি, আজ মধ্যরাত থেকে সেতুর ওপর হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, সংস্কারকাজের জন্য রোববার দিবাগত রাত থেকে পুনরায় পোস্তগোলা সেতুতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
ঢাকা জেলা দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশ কার্যালয়ের পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় (বাবুবাজার) সেতু ও বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। বাবুবাজার সেতুর উত্তর প্রান্ত রাজধানীর নয়াবাজার এলাকায় সড়ক সংস্কারকাজ চলমান থাকায় ঢাকাগামী যানবাহন সেতু দিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। এতে মাঝেমধ্যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।