সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন সহিংসতায় আহত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকিরের স্বজন আবদুল আলিম (৫২) নিহত হয়েছেন। তিনি ৮ মে রাতে ভোটের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পরপর বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম সরকারের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছিলেন। ঘটনার চার দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আজ সোমবার ভোরে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত আবদুল আলিম বেলকুচি উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের মৃত হায়দার আলী ছেলে। আটক ব্যক্তিরা হলেন একই গ্রামের চান মিয়া, তাঁর ছেলে রাসেল আহম্মেদ ও চান মিয়ার ভাই আবুল হোসেন।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল আলিমের স্বজনেরা মৌখিক অভিযোগ দিলে মারধর ও সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে পুলিশ আটক করেছে। ওসি বলেন, আজ সকালে মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয় লোকজন আজ সকালে অভিযুক্ত তিনজনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছে।
পুলিশ, নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবদুল আলিম চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকিরের (মোটরসাইকেল প্রতীক) কর্মী ছিলেন। ৮ মে রাত ৯টায় ভোটের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে আবদুল আলিমকে বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। দোয়াত কলম প্রতীকের বিজয়ী প্রার্থী আমিনুল ইসলাম সরকারের কর্মী চান মিয়া, রাসেল, আবুল, বাবলু, মান্নান, সাদ্দাম ও আবদুল খালেকের নেতৃত্বে আবদুল আলিমের ওপর হামলা চালানো হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে চার দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আজ ভোরে মারা যান তিনি।
নিহত আবদুল আলিমের স্বজনদের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন আজ সকালে অভিযুক্ত একই গ্রামের বাসিন্দা দোয়াত কলম প্রতীকের সমর্থক চান মিয়া মিয়া, তাঁর ছেলে রাসেল আহম্মেদ ও চান মিয়ার ভাই আবুল হোসেনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছে।
পরাজিত মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির বলেন, ‘নিহত আবদুল আলীম আমার চাচা। আমি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ বদিউজ্জামান আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে থানা চত্বরে দোয়াত কলমের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম সরকার ঘোষণা দিয়েছিলেন, আমার রক্ত নিয়ে খেলবেন। সেটা করতে না পেরে আজ আমার কর্মীদের রক্ত নিয়ে খেলছেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।