ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় বিএনপির চারটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত চারটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সোনাগাজী উপজেলা, সোনাগাজী পৌরসভা এবং দাগনভূঞা উপজেলা ও দাগনভূঞা পৌরসভা শাখা বিএনপির কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে দুই উপজেলায় পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। নতুন কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ আখ্যায়িত করেন তাঁরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে জালাল উদ্দিনকে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন জামাল উদ্দিন, সদস্যসচিব করা হয়েছে সৈয়দ আলম ভূঁইয়াকে। সোনাগাজী পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মনজুর হোসেনকে। এ ছাড়া মোহাম্মদ এয়াছিনকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও নিজাম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করা হয়।
দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে আকবর হোসেনকে। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন মাহমুদুল হক ও সদস্যসচিব হয়েছেন কামরুল উদ্দিন। দাগনভূঞা পৌরসভার বিএনপির আহ্বায়ক হয়েছেন শফিকুর রহমান। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন কাজী সাইফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব হয়েছেন হুমায়ুন কবির।
কমিটি গঠনের বিষয়টি ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চারটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘দুই উপজেলার যে চারটি কমিটি দেওয়া হয়েছে, তা ভুয়া ও অগঠনতান্ত্রিক। আমি দলের প্রধান, আমি জানি না কমিটি হয়েছে। আমার কোনো স্বাক্ষরও নেই। কে বা কারা একটি মেসেজ দিয়ে সদস্যসচিবকে বলেছেন কমিটি দিতে। সদস্যসচিব আমাকে বলেছেন স্বাক্ষর করতে, আমি স্বাক্ষর করব না বলেছি।’
এদিকে ১৯ বছর পর সোনাগাজী উপজেলা ও পৌরসভা শাখা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দলের একটি অংশ এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন। তবে আরেকটি অংশের নেতা-কর্মীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছেন।
সোনাগাজীতে কমিটি ঘোষণার পর সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঘোষিত উপজেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিনের অনুসারী তিন শতাধিক নেতা-কর্মী পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা উপজেলার দুটি ইউনিটের কমিটি ঘোষণাকে অবৈধ দাবি করে তা প্রত্যাহার করার দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সদ্য সাবেক উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিন উদ্দিন, পৌর বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি আবুল মোবারক, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কামরুল ইসলাম, যুবদল নেতা রহমত উল্যাহ, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মাসুদ প্রমুখ।
জানতে চাইলে উপজেলা শাখার নতুন কমিটির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সবাইকে তো আর পদ দেওয়া যায় না। আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করব। পদ না পেয়ে কারও মান–অভিমান থাকতে পারে। জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে।’
দাগনভূঞা উপজেলায় নতুন কমিটি ঘোষণার পর আহ্বায়ক পদ পাওয়া আকবর হোসেনের অনুসারীরা বাজারে আনন্দমিছিল করেছেন। অপর দিকে কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুল ইসলামের অনুসারীরা বসুরহাট সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় কিছু পটকাও ফাটানো হয়।
দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের একাংশ। মিছিলটি দাগনভূঞা উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কবীর আহমদসহ ছাত্রদল, যুবদলের একাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির বিষয়ে জানতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।