অধ্যাপক জহুরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার

শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রী ফুলপরীকে স্যালুট করি

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ফুলপরী সাহস করে তদন্ত কমিটির কাছে তাঁর ওপর চলা নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন। ফুলপরীর এই প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম।

জহুরুল ইসলাম
জহুরুল ইসলাম
প্রশ্ন

ফুলপরীর প্রতিবাদকে কীভাবে দেখছেন?

জহুরুল ইসলাম: আমরা চোখ থাকতেও দেখতে পারি না। কিছু করতে পারি না, আমরা যে অন্ধ, সেটার প্রমাণ দিল মেয়েটা। মেয়েটি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। ও (ছাত্রী) হয়তো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি এটাকে অনুকরণীয় মনে করি। তার এই দৃষ্টান্ত হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র থেকে বড় যেকোনো অপরাধই থামাতে ভূমিকা রাখবে।

প্রশ্ন

অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য ফুলপরীর মতো আরও শিক্ষার্থী দরকার?

জহুরুল ইসলাম: আসলেই সে ফুলের মতোই আমাদের কাছে এসেছে। সে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল। বুয়েটের মতো ঘটনাও ঘটে যেতে পারত। সে যদি ঘটনাটা প্রকাশ না করত, না জানি আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটত। আমি শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রী ফুলপরীকে স্যালুট করি।

প্রশ্ন

অনেক শিক্ষার্থীই তো এমন ঘটনা শিকার হন। তাঁরা কেন মুখ খোলেন না?

জহুরুল ইসলাম: এটা ঠিক। অনেক ছাত্রছাত্রী এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়। কিন্তু তারা মুখ খোলে না। তাদের ভেতর ভয়, আতঙ্ক ও শঙ্কা কাজ করে। এই সময় কথা বলাও খুব দুরুহ ব্যাপার। কিন্তু মেয়েটি (ফুলপরী) সহজ–সরলভাবে সব বলছে। ঘুনেধরা পরিবেশ দূর করতে ফুলপরীরা আসবে।

প্রশ্ন

বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন–নির্যাতন বন্ধে কথা হয়। বিভিন্ন সময় এসব বিষয়ে প্রতিবাদও হয়। কিন্তু সমস্যা থেকেই যায়, কেন?

জহুরুল ইসলাম: এটা হচ্ছে নেতৃত্বের সমস্যা। আমাদের মধ্যে একটা স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থপরতা কাজ করে। কেন জানি আমরা পরিষ্কার বা স্বচ্ছ হয়ে চলি না। কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠীমুখী চেতনাধারী হয়ে পড়ি। এতে মানুষের ন্যূনতম স্বাধীনতা থাকে না।

প্রশ্ন

এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে সবার এগিয়ে আসার প্রবণতা কি কমে যাচ্ছে?

জহুরুল ইসলাম: এটা ভালো প্রশ্ন করেছেন। যখনই কোনো ঘটনা ঘটে আমরা চালাকি করি। কোনো দায়দায়িত্ব নিই না। কেন জানি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি না।

প্রশ্ন

ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা শিক্ষকেরা কি আরও বেশি তৎপর হতে পারতেন?

জহুরুল ইসলাম: সবাইকে আরও আগেই একাট্টা হওয়া দরকার ছিল। মেয়েটা যেভাবে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে এসেছে, আমাদেরও ঠিক স্বাভাবিকভাবেই তৎপর হওয়া দরকার ছিল। এতে দেশ–জাতির ক্ষতি হয় না। বরং সবার উপকারই হয়।

প্রশ্ন

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

জহুরুল ইসলাম: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।