অফিস সহায়কের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে অস্ত্রোপচারের সময় ময়দান আলী (৫২) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে শ্রীবরদী পৌর শহরের চৌরাস্তা মোড় এলাকার ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া রোগী ময়দান আলীর বাড়ি উপজেলার খড়িয়াকাজিরচর ইউনিয়নের মামদামারী গ্রামে।

এ ঘটনায় আজ রোববার জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান শাহীন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৪ মালিকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে শ্রীবরদী থানায় হত্যা মামলা করেছেন ময়দান আলীর ছেলে মোস্তফা কামাল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শ্রীবরদী থানার পুলিশ রোববার সকালে জুয়েল ও তামিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী। গ্রেপ্তার দুজনকে রোববার বিকেলে শেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুর-ই-জাহিদের আদালতের নির্দেশে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে উপজেলার মামদামারী গ্রামের ময়দান আলী তাঁর শরীরের বাঁ হাতের বগলের নিচের অংশে (বুকের পাশে) একটি ফোঁড়ার (টিউমার আকৃতির) চিকিৎসার জন্য শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। বিষয়টি জটিল বিধায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে (ময়দান আলী) শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান ও একটি দালাল চক্র ময়দান আলীকে ভুল বুঝিয়ে হাসপাতালের কাছের পৌর শহরের চৌরাস্তা এলাকার ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান।

পরে রোগী ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ময়দান আলীর ফোঁড়ার অস্ত্রোপচার করে দেওয়ার কথা বলেন তাঁরা। এরপর ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রের ভেতরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান রোগী ময়দান আলীর ফোঁড়ার অস্ত্রোপচার করা শুরু করেন। এ সময় ময়দান আলীর মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে মেহেদী হাসান ও ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রের মালিকপক্ষ দ্রুত পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে শ্রীবরদী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত ময়দান আলীর লাশ উদ্ধার করেন। পরে রোববার সকালে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। রোববার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে।

পলাতক থাকায় শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক মেহেদী হাসান শাহীন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে এই অভিযোগের বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ময়দান মিয়ার চাচাতো ভাই আবদুর রশিদ বলেন, ময়দান আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। এ সময় কতিপয় দালাল তাঁকে ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। পরে অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন তিনি।

শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাইয়ুম খান সিদ্দিকী রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি রোগনির্ণয়ের প্রতিষ্ঠান হলেও এখানে অস্ত্রোপচারের অনুমোদন ছিল না। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি জুয়েল ও তামিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেহেদী হাসানসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।