ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড়কাঁপানো শীতে জীবন ওষ্ঠাগত। এর মধ্যেও জীবিকার তাগিদে ছুটে চলেছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। আজ শনিবার সকাল সাতটায় চুয়াডাঙ্গার কোর্টরোড এলাকায়
ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড়কাঁপানো শীতে জীবন ওষ্ঠাগত। এর মধ্যেও জীবিকার তাগিদে ছুটে চলেছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। আজ শনিবার সকাল সাতটায় চুয়াডাঙ্গার কোর্টরোড এলাকায়

‘শীতির কামড়ে মনে হচ্চে হাড় ফাইটে যাচ্চে, খ্যাতা থেইকে বের হতি কষ্ট হয়’

চুয়াডাঙ্গা শহরের হাটকালুগঞ্জের বাসিন্দা মো. আবদুল্লাহ। জীবিকার তাগিদে হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যেও সকাল সকাল ভ্যান নিয়ে বের হয়েছেন তিনি। তিনজন যাত্রী নিয়ে হাটকালুগঞ্জ থেকে যাচ্ছিলেন বড়বাজারে। আজ শনিবার সকাল সাতটার দিকে কোর্টরোডে কথা হয় আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শীতির কামড়ে মনে হচ্চে হাড় ফাইটে যাচ্চে। ল্যাপ-খ্যাতার ভিতর থেইকে বের হতি খুপই কষ্ট হয়। বের না হলি তো প্যাট চলেনারে ভাই।’

চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে আজ টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ঘন কুয়াশা বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঝরছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ১০০ শতাংশ ও ৯টায় ৯৫ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে। টানা দুই দিনের এই শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অনেকটা থমকে গেছে। বিশেষ বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে আসায় যানবাহন চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

হাটকালুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, গত বছরের ৫ থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। চলতি বছরে এক সপ্তাহ দেরিতে গতকাল শুক্রবার প্রথম শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলেও তা অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিসহ তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী মিজানুর রহমান অন্যান্য দিনের মতো আজও ভোর থেকে শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে নেমেছেন। তাঁকে নির্দিষ্ট এলাকার সব ময়লা-আবর্জনা সকাল আটটার মধ্যে পরিষ্কার করে গার্বেজ স্টেশনে ফেলতে হয়। শহরের শহীদ আলাউল হক সড়কে কর্মরত অবস্থায় সকাল সাড়ে ছয়টায় কথা হয় মিজানুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কদ্দিন ধইরে যেরাম জাড় (শীত) লাগজে, তাতে মনডা বলচে না ঘর থিকে বের হই। কিন্তু, উপায় নেই। তাই জাড়ের মদ্দিই কাজে নাইমে পড়িচি।’

পৌর এলাকার মালোপাড়ার বাসিন্দা মৎস্যজীবী দুই ভাই ভরত হালদার ও জিড়েন হালদার একই সুরে বলেন, গত কয়েক দিনের শীতের কারণে মাছ ধরতে পুকুরে নামা খুবই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানিতে নামলেও বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। যে কারণে বাজারে মাছের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় উচ্চ মূল্যে তা বিক্রি হচ্ছে।

শীতের সকালে কাজে বের হয়েছেন মানুষজন। গতকাল শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জে

মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে ঢাকার পথে চলাচলকারী রয়েল এক্সপ্রেসের চালক প্রদীপ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে গাড়ির গতি ঘণ্টায় ন্যূনতম ৮০ কিলোমিটার থাকলেও ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে আসায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি তোলা যাচ্ছে না। তা ছাড়া বৃষ্টির ফোঁটার মতো কুয়াশা ঝরতে থাকায় গাড়ির কাচ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। জ্যেষ্ঠ এই চালক বলেন, ঘন কুয়াশার মধ্যেও ছোট ও মাঝারি যানবাহনের চালকেরা ‘ফগ লাইট’ না জ্বালিয়ে যানবাহন চালাচ্ছেন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের ফেরিঘাট সড়কে দোকান পাহারায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নৈশপ্রহরীর কাজ করে চলেছেন মো. বড় বুড়ো মিয়া (৫৫)। তিনি বলেন, ‘রাতির ব্যালা কুয়োর (কুয়াশা) ঠ্যালায় পাঁচ হাত দূরিও কিচু দ্যাকা যায় না। সাতে কনকনে ঠান্ডায় শরীলডা হিম হয়ে যায়। গরম কাপুড় না থাকায় খুপই কষ্ট করে ডিউটি করতি হয়। শীতির হাততি বাঁচতি ছিঁড়া কাগজের টুকরা জ্বালি রাত পার কত্তি হয়।’

এদিকে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র ও শীতের কম্বল বিতরণ করেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, এবার শীত মৌসুমে ৪টি পৌরসভা, ৩৯টি ইউনিয়নসহ জেলার ৪ উপজেলায় অন্তত ১৭ হাজার ৬৫০টি শীতবস্ত্র-কম্বল পাঠানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) তা বিতরণ শুরু করেছেন।