রাবি ছাত্রের মৃত্যু

রাজশাহী মেডিকেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

রাজশাহী নগরের চকপাড়া থেকে আসা বাদল নামে এক রোগী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মারা যান। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলায় বাদল প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। আজ সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর হাসপাতালে সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। গতকাল বুধবার রাত ১২টায় শুরু হওয়া এ কর্মবিরতিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। এতে রোগীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আলোচনা সভা হওয়ার কথা রয়েছে।

গতকাল রাত আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। এরপর দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাত ১২টার দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সবাই একযোগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

আজ সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একটি লাশের সামনে বসে কয়েকজন কাঁদছেন। ওই লাশের সঙ্গে থাকা স্বজনেরা কেউ কোনো কথা না বললেও তাঁদের আশপাশের লোকজন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে না। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসক পাচ্ছেন না।

মো. সাজ্জাদ হোসেন নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁর বাবা শহিদুজ্জামানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁরা নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে এসেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভর্তি করার পর থেকে তাঁরা কোনো চিকিৎসক পাননি। শুধু নার্স এসেছেন। তাই বাবাকে নিয়ে এখন তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ২৯০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন। তাঁরা ভাগ হয়ে তিন শিফটে কাজ করেন। তবে গতকাল রাত আটটার পর থেকে হাসপাতালে তেমন কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। রাতের দিকে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনগুলোও হয়নি।

আজ সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বিভাগীয় প্রধান ও ইউনিটপ্রধানদের নিয়ে এক জরুরি সভা করেছেন। সভায় শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালের ভেতরে কোনো চিকিৎসকের অবহেলায় রাবির ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হবে। এ ছাড়া হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় দায়ী কারা, সে বিষয়েও তদন্ত কমিটি কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হাসপাতাল ও পুলিশের সমন্বয়ে আগের রাতের কমিটির মতো এই কমিটিও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট।

সভা শেষে শামীম ইয়াজদানী বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সেবা না দিলে হাসপাতাল ভালোভাবে চলে না। তাঁদের কাজে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। তাঁরা নিরাপত্তা চান। হাসপাতালে এ পরিস্থিতির জন্য দোষী ব্যক্তিদের বিচার চান। সেগুলোও দেখা হচ্ছে। তাঁরা দুপুরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বসবেন।

কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে নওগাঁ থেকে আসা রোগী শহিদুজ্জামানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে

কর্মবিরতির বিষয়ে রামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, হাসপাতালে কিছু নিয়মকানুন থাকে। সেই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা দিতে হয়। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাবির ওই শিক্ষার্থীরও তাঁরা চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওই শিক্ষার্থী মারা যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের উত্তেজনায় চিকিৎসকেরা সেখানে ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা চড়াও হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান। এতে ভয়ে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। হামলাকারীদের বিচার না করলে এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।

এদিকে আজ সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে জানাজা শেষে শাহরিয়ারকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। ওই লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে দুই বাসভর্তি শাহরিয়ারের সহপাঠীরাও যাচ্ছেন। সেখানে আজ বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হবে।