নোয়াখালী

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দলের প্রয়োজন মনে করলে জ্বালিয়ে দেবেন কাদের মির্জা

ফেসবুক লাইভে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
ছবি: সংগৃহীত

দলের প্রয়োজন মনে করলে সাংবাদিক ডেকে নিজের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা জ্বালিয়ে দেবেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন। কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

প্রায় ২২ মিনিটের লাইভ বক্তৃতায় আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। তলোয়ারের নিচে যে সংগঠনের জন্ম, সেই দলের কর্মীদের কেউ ভিসা নীতির ভয়, কেউ রক্তচক্ষু দেখিয়ে, কেউ আগুনসন্ত্রাস করে কখনো দমাতে পারবে না। আমার আমেরিকার ভিসা আছে, দলের প্রয়োজনে যদি মনে করি ভিসা সাংবাদিকদের ডেকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেব।’

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমেরিকা ও তাদের আজ্ঞাবহ জাতিসংঘ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এবং বিরোধীদের আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বিবৃতি দেয়। অথচ এই বিরোধীরা যে রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর ও আগুনসন্ত্রাস করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে জনগণের জানমালের ক্ষতি করছে, তা নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই। মূলত তাদের এসব কথাবার্তায় প্রমাণিত হয়, যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।’

বিএনপির আন্দোলন লোদে (কাদায়) আটকে গেছে। তারা ২৯ জুলাই আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে আবার অ-আ থেকে শুরু করেছে, ও-ঔ পর্যন্ত যেতে যেতে দেশে নির্বাচন হয়ে যাবে।
আবদুল কাদের মির্জা, মেয়র, বসুরহাট পৌরসভা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী

বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের সমালোচনা করে কাদের মির্জা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সব কলঙ্কিত অধ্যায়ের রচনাকারী দল বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে জনগণের জানমালে আঘাত করে অগ্নিসন্ত্রাস আর বিদেশি ফরমাশে ক্ষমতায় যাওয়ার নীলনকশা একে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে তারা।’

সেতুমন্ত্রীর ভাই আবদুল কাদের মির্জা বিএনপির আন্দোলনের ব্যর্থতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘কানাডার আদালতে টানা পাঁচবার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত বিএনপির আন্দোলন লোদে (কাদায়) আটকে গেছে। তারেক রহমানের মোতাবেক সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা ঢাকার প্রবেশধারে বসে থেকে লাগাতার আন্দোলন করবে। নেতা-কর্মীদের বলেছিল জামাকাপড় নিয়ে আসতে। শেষ পর্যন্ত এই জামাকাপড় কেউ হোটেলে, কেউ বাসায়, কেউ পথেঘাটে ফেলে চলে গেছে। এদের এসব আন্দোলন–সংগ্রাম নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন নয়।’

কাদের মির্জা বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন লোদে (কাদায়) আটকে গেছে। তারা ২৯ জুলাই আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে আবার অ-আ থেকে শুরু করেছে, ও-ঔ পর্যন্ত যেতে যেতে দেশে নির্বাচন হয়ে যাবে। তাদের (বিএনপি) নিয়ে চিন্তা করার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।’

কাদের মির্জা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আটটি বিভাগীয় শহরে শোভাযাত্রা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নেত্রীর প্রতি একটি আহ্বান জানাব, আপনি আমাদের আটটি বিভাগীয় শহরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আপনার নেতৃত্বে একটি করে শোভাযাত্রা করবেন, যার প্রতিপাদ্য থাকবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। শোকের মাসে করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাহলে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জীবিত হবে।’

বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দ্রব্যমূল্য নিয়েও লাইভে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিশেষ করে নির্মাণসামগ্রীর দাম অত্যন্ত বেশি। বিদ্যুৎ সমস্যা, ডেঙ্গু সমস্যা আজকে খুব জটিল। এসব দিকে নজর দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তাই বিএনপির এসব আন্দোলনকে পাত্তা না দিয়ে দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ ও ডেঙ্গু সমস্যার প্রতি নজরদারি ভালোভাবে রাখতে হবে। আর কোনো কোনো পাড়ার দিকে প্রধানমন্ত্রীর নজর দিতে হবে।’

মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে কাদের মির্জা বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের অনেক এমপি-মন্ত্রী আছেন যে তাঁর এলাকায় কত উন্নয়ন হয়েছে, তিনি নিজেও জানেন না।’ তিনি বলেন, ‘নমিনেশনের (দলীয় মনোনয়ন) পেছনে ঘোরা এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মী ও জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এলাকা ছেড়ে ঢাকায় নমিনেশনের জন্য ঘোরে। কেউ কেউ মনে করছেন, নমিনেশন পেলেই বিজয়। আপনার সেদিকে একটু নজর রাখতে হবে।’

২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে জাতীয় নির্বাচন, ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের অপরাজনীতি, টেন্ডারবাজি, চাকরি-বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন আবদুল কাদের মির্জা। একপর্যায়ে তিনি দলের মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতা, এমনকি বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও ভাবি ইশরাতুন্নেসা কাদেরকে নিয়েও নানা সমালোচনা শুরু করেন। এ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। যা শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী সংঘর্ষে গড়ায়। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৭২টি মামলা হয়েছে। আসামি হয়েছে দুই পক্ষের সাত থেকে আট হাজার দলীয় নেতা-কর্মী।