নদীর ঘাটে জেলেদের সারি সারি নৌকা। এগুলোর প্রতিটির দুই মাথায় কাঠের গায়ে লাল রঙের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। আর ভেতরে সাদা রং দিয়ে অনুমতিপত্র নম্বর লিখে দিচ্ছেন বন বিভাগের কর্মীরা। নদীর পাড়ের জেলেদের জটলার মধ্যে এক বনরক্ষীর হাতে একগাদা কাগজপত্র রেখে কী যেন লিখছিলেন। তিনি জানান, সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের নৌকার মাপ নেওয়া হচ্ছে। পরে মাপ অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করে বনে ঢোকার অনুমতিপত্র নবায়ন করা হচ্ছে এখানে।
আজ সোমবার সকালে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ও বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন–সংলগ্ন এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, যেসব নৌকায় লাল রং আর নম্বর লেখা থাকবে, কেবল সেগুলো নিয়েই মাছ ও কাঁকড়া আহরণের জন্য জেলেরা ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।
ভিড়ের মধ্য থেকে বেরিয়ে এসে বন বিভাগের সহযোগী কমিউনিটি প্যাট্রোলিং টিমের (সিপিজি) সদস্য বিল্লাল হোসেন জানান, জেলে বাওয়ালিদের সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য ১ জুলাই থেকে অনুমতিপত্র (বিএলসি) নবায়ন শুরু হয়েছে। জুলাই মাসজুড়ে এ কার্যক্রম চলবে। শেষের দিকে হওয়ায় এ সময়ে ভিড় তুলনামূলকভাবে বেশি। নবায়নের পর অনুমোদিত নৌকা নিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেরা সুন্দরবনে ঢুকতে পারবেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর জুলাই মাসে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের বনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নবায়ন করা হয়। প্রায় ১২ হাজার বনজীবীকে সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। এ বছর সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ মণ ধারণক্ষমতার একটি নৌকার জন্য ১৫ টাকা হারে রাজস্ব দিতে হচ্ছে বনজীবীদের। এই অনুমতিপত্রের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।
প্রতিবছর জুলাই মাসে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের বনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নবায়ন করা হয়। প্রায় ১২ হাজার বনজীবীকে সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। এ বছর সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ মণ ধারণক্ষমতার একটি নৌকার জন্য ১৫ টাকা হারে রাজস্ব দিতে হচ্ছে বনজীবীদের। এই অনুমতিপত্রের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।
কয়রা গ্রামের জেলে কামরুল ইসলাম জানান, ‘জুন থেকে তিন মাস আমাগের বনে ঢোকার অনুমতি নাই। এর মধ্যে আমার নৌকা-জাল মেরামত করে ফেলিছি। আজ নৌকা নিয়ে অনুমতিপত্র নবায়ন করতে আইছি। নৌকার মাপ দেয়া শেষ। মাপে দৈর্ঘ্য–প্রস্থ মিলিয়ে দেখা গেছে ৪০ দশমিক ৬৪ কুইন্টাল। কাগজে–কলমে রাজস্ব লেখা সাড়ে ৫৭ টাকা। কিন্তু এক দালালের কাছে কাগজ দিছিলাম, তারে দেয়া লাগছে ৬০০ টাকা।’
তৃতীয় কোনো ব্যক্তি নয়, জেলেদের সরাসরি কাগজপত্র জমা দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট নৌকা নিয়ে ফরেস্ট স্টেশনে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল। তাঁর মতে, ‘এতে জেলেদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তারপরও কিছু জেলে প্রতারিত হচ্ছে। জেলেরা সচেতন না হলে আমাদের কী করার আছে?’
গত বছর অনুমতিপত্র ছিল, এমন অনেক বনজীবী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁদের নৌকার অনুমতি নবায়ন করা হচ্ছে না।বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম
কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে বেরিয়ে সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন এলাকাতেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। সেখানেও কয়েকজন বনজীবী তাঁদের নৌকা নিয়ে ফরেস্ট স্টেশনের সামনে কয়রা নদীর ঘাটে অপেক্ষা করছেন। বনরক্ষীরা প্রতিটি নৌকার মাপ নিয়ে রং লাগিয়ে দিচ্ছেন।
বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর অনুমতিপত্র ছিল, এমন অনেক বনজীবী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁদের নৌকার অনুমতি নবায়ন করা হচ্ছে না।
সেখানে অনুমতিপত্র নবায়ন করতে আসা জেলে গফুর সরদার বলেন, ‘এই নৌকা আর বদলানোরও সুযোগ নেই। এই নৌকা নিয়েই বনে ঢুকতে হবে। দীর্ঘদিন সুন্দরবন বন্ধ। এখন অন্যের জমিতে কাজ করছি। কী আর করব, পেট তো চালাতে হবে। সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি দিলেই বনে ঢুকতি পারবানে।’
সার্বিক বিষয় নিয়ে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ এবং বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাসের জন্য বন্ধ ছিল বনের দুয়ার। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তবে যে কেউ চাইলে বনে ঢুকতে পারেন না। প্রবেশের আগে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে অনুমতি নিতে হয়। অপরাধের সঙ্গে জড়িত ৯৪৫ বনজীবীর তালিকা করে তাঁদের অনুমতিপত্র নবায়ন না করে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।