জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের ভবনের নির্মাণকাজ নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান। গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের ভবনের নির্মাণকাজ নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান। গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান, বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণকাজ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বন্ধ থাকা নির্মাণকাজ শুরুর দাবিতে বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অন্যান্য বিভাগের একদল শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানিয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুপুর থেকে অবস্থান নেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় তাঁরা নতুন প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দেন। এতে কয়েকজন শিক্ষকসহ কর্মকর্তারা ভেতরে আটকে পড়েন। রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে যান।

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন বিভাগের একদল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় তাঁরা চারুকলার শিক্ষার্থীদের পেছনে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের দাবি, মাস্টারপ্ল্যান না করে চারুকলার ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে না। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ২৮ নভেম্বর উপাচার্য এ বিষয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পরে রাত সোয়া ১১টার দিকে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা নিজেদের হলে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর চারুকলা ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করে সেখানে মিছিল নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের হলের পাশে চারুকলার ভবন নির্মাণ না করতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিয়ান বলেন, ‘২৮ নভেম্বর উপাচার্য আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন, এমন আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।’

চারুকলা বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাঈদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর থেকে আমাদের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর জন্য আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলেছে। হঠাৎ রাতে (গতকাল) একদল শিক্ষার্থী পেছনে অবস্থান নিয়ে আমাদের টার্গেট করে উসকানিমূলক স্লোগান দিয়েছেন। আমাদের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অসম্মানজনক স্লোগান দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জিয়াউদ্দিন আয়ান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট করে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। মাস্টারপ্ল্যান করে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে ভারতের টাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। চারুকলার জন্য যেখানে ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল, সেখানে নির্বিচার অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর জন্য চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ময়েজউদ্দিনের মতো আওয়ামী লীগের দোসরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে স্থানটিতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেটি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম খ্যাত জলাশয়ের পাশে হওয়ায় ওই সময় একদল শিক্ষার্থী এতে বাধা দেন। তাঁদের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে অন্তত ১৫০টি গাছ কেটে নির্মাণকাজের শুরু করা হয়। এরপর সরকার পতনের পর একদল শিক্ষার্থী ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা ভবনটির নির্মাণ স্থগিতের দাবি জানান। পরে ৩ নভেম্বর এক প্রশাসনিক সভায় সেখানে সাময়িকভাবে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।