জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় জামাই মেলায় মানুষের ঢল নেমেছে। মেলাকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ ছড়িয়েছে এলাকায়। গতকাল শনিবার উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পলাশপুর বাজার মাঠে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো এখানে ‘জামাই মেলা’ বসে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেলা চলছে। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার জামাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। তাঁরাই মূলত মেলার বাহারি জিনিসপত্রের ক্রেতা।
স্থানীয় তেঘরিয়া গ্রামের জামাই আবদুল বারিক বলেন, বছর হলো এই এলাকায় বিয়ে করেছেন। এবারই প্রথম মেলা উপলক্ষে দাওয়াত পেয়েছেন। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মেলার এক দিন আগেই শ্বশুরবাড়ি এসেছেন। মেলার প্রথম দিন সকালে শ্বশুর ও শাশুড়ি টাকাও দিলেন। সেই টাকা নিয়ে মেলা থেকে একটি মাছ কিনেছেন। শ্বশুর ও শাশুড়ির জন্য কিনেছেন পান-সুপারি। ছোট শ্যালিকার জন্য কিনেছেন মিষ্টান্ন দ্রব্য। সত্যিই খুব ভালো লাগছে।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, মেলায় কসমেটিকস, প্রসাধনী, খাবার, খেলনা, মিঠাই-মিষ্টান্ন ও মাছসহ বিভিন্ন ধরনের তিন শতাধিক দোকান বসেছে। আছে চটপটি-ফুচকা থেকে মুখরোচক নানা পদের খাবারের দোকানও। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, চরকি, দোলনাসহ নানা আয়োজন। সাজিয়ে রাখা হয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, গ্রাস কার্পসহ বাহারি মাছ। এসব মাছ জামাইয়েরা কিনে শ্বশুরবাড়িতে যান। প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবমুখর হয়ে উঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ।
পলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা মামুন মিয়া বলেন, এলাকার মানুষের মধ্যে মেলা ঘিরে ঈদের মতোই আনন্দ লক্ষ করা যাচ্ছে। মেলা উপলক্ষে চরপাকেরদহ ইউনিয়ন ও আশপাশের বিবাহিত নারীরা তাঁদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলা উপলক্ষে জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শ্বশুর কিংবা শাশুড়ি। সেই টাকার সঙ্গে আরও কিছু টাকা যোগ করে জামাইয়েরা মেলা থেকে বড় মাছ, মিষ্টান্ন দ্রব্যসহ বাহারি জিনিসে কিনে শ্বশুরবাড়ি ফেরেন।
মেলার শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল আলম বলেন, ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় মেলা জমে উঠেছে। নারী-পুরুষ ও শিশুদের ঢল নেমেছে। মেলাটি গত বছরও খুব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছি। আশা করছেন, এবারও সুন্দরভাবেই শেষ হবে। পুরো মেলা ঘিরে কমিটির সদস্যরা শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছেন।
মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বলেন, মেলায় গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটছে। প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় প্রায় ১৫ কোটি টাকার কেনাবেচা হওয়ার আশা করা হচ্ছে।