চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী দখল করে নতুন মাছবাজার বা ফিশারি ঘাট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নদী রক্ষা কমিশনও বলছে নদী দখল করে গড়ে ওঠা বাজার অবৈধ। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও চলমান। এর মধ্যে ২৯ মে উচ্চ আদালতের আদেশ বাজারের বিপক্ষে গেছে। কিন্তু এরপরও ওই বাজারে নতুন করে গড়ে উঠছে অবৈধ অস্থায়ী স্থাপনা।
৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এই বাজারের প্রবেশমুখে নতুন করে এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। বাঁশ, টিন ও প্লাস্টিক দিয়ে নির্মাণ করা হয় এই স্থাপনা। এ ছাড়া বাজারের পেছনের দিকেও কয়েক মাস আগে কিছু অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সেগুলোতেও চা দোকান, পান দোকান গড়ে তোলা হয়। এ ছাড়া মাছের টুকরি, ভ্যান ইত্যাদি রাখা হচ্ছে এসব স্থাপনায়।
নতুন করে এসব স্থাপনা গড়ে তোলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না ফিশারিঘাট পরিচালনা কমিটি সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। জেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার বাজারে মাইকিং করে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলেছে। এর আগে বুধবার জেলা প্রশাসনের সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরান মাহমুদ ডালিম ফিশারিঘাট পরিদর্শন করেন।
নতুন করে স্থাপনার বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরান মাহমুদ ডালিম প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা উঠলে তা উচ্ছেদ করা হবে। ফিশারিঘাট নিয়ে উচ্চ আদালতের একটি আদেশ হয়েছে। ওই আদেশ বাজারের বিপক্ষে গিয়েছে বলে শুনেছি। আদেশের অনুলিপি হাতে পেলে সব স্থাপনার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইমরান মাহমুদ ডালিম আরও বলেন, বাজারটি নিয়ে এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের একটি মামলাও দেওয়ানি আদালতে চলমান রয়েছে। এই বাজার মূলত বন্দর থেকে ইজারাপ্রাপ্ত হয়ে করা হয়, তা নিয়ে ওই মামলা চলছে। জায়গাটি ১ নম্বর খাসখতিয়ানভুক্ত।
জানা গেছে, গত ২৯ মে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মৎস্যজীবী সমিতির করা রিট নিষ্পত্তি করেছেন। পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ফিশারিঘাট–সংক্রান্ত এই মামলায়ও সংগঠনটি পক্ষভুক্ত হয়।
সংগঠনটির আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগের রিট পিটিশনে আদালত কর্ণফুলী নদী রক্ষার জন্য নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার আদেশ দেন। পরে মৎস্যজীবী সমিতি অপর একটি রিট করে। এখন আদালত তাদের রিটটি নিষ্পত্তি করেছেন। এখন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো বাধা নেই। বাজারটি নদীর অবৈধ স্থাপনা।
কিন্তু মৎস্যজীবী সমিতি এখনো বাজারটিতে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে ঢোকার ফটক পেরিয়ে সামনে গেলেই ডান পাশে নদীর পাড়ে বাঁশ টিন দিয়ে স্থাপনা তৈরি করা হয়। ওখানে সকালে মাছ বেচাকেনা চলে। আগে সেখানে খালি ছিল। এ ছাড়া পেছনের অংশে দক্ষিণ পাশে যে অস্থায়ী স্থাপনাগুলো করা হয়, সেগুলো কয়েক মাস আগের।
দক্ষিণ পাশে কয়েক বছর আগে থেকেই তারা নানা স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করে আসছিলেন। এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে বাজারের পেছনের অংশে বা দক্ষিণে ইট দিয়ে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করেছিল। তখন তা ভেঙে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এর পর আস্তে আস্তে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা হয় সেখানে। তখন সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকারের বিরুদ্ধে এই দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছিল। তিনি আবার বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি। এত দিন বাজারের আইনগত এবং পরিচালনা–সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম দেখাশোনা করতেন বাবুল সরকার।
৫ আগস্টের পর থেকে তাঁকে বাজারে তেমন একটা দেখা যায় না। সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও উপদেষ্টা নূর হোসেন এখন সবকিছু দেখাশোনা করেন। নতুন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং রিট পিটিশন নিষ্পত্তি বিষয়ে দুজনের কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, নদী কমিশন আগে থেকে বলে আসছে বাজারটি নদী দখল করে হয়েছে। এখন আদালতও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী রক্ষার আদেশ দিয়েছেন। তাঁদের রিট খারিজ হয়ে গেছে। তারপরও তাঁরা নতুন করে অবৈধ বাজারে স্থাপনা করে যাচ্ছেন।