বিদ্রোহী আর প্রার্থিতা ঠেকাতে তৎপরতা

আ.লীগ নেতা ফয়জুল আনোয়ার এবং বিএনপি নেতা আরিফুল হক ও বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন করতে চান বলে গুঞ্জন রয়েছে।

আরিফুল হক চৌধুরী, ফয়জুল আনোয়ার ও বদরুজ্জামান সেলিম

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলের নেতারা স্বস্তিতে নেই। মেয়র পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাঠে নামতে পারে, এ আশঙ্কা রয়েছে আওয়ামী লীগে। এ অবস্থায় বিদ্রোহী এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি। বিএনপির দুই নেতা নির্বাচনে লড়তে পারেন এমন আভাস পেয়ে তাঁদের প্রার্থিতা ঠেকাতে তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়। তিনিসহ এখানে দলের ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আনোয়ারুজ্জামান মহানগরের রাজনীতিতে কোনো দিন সক্রিয় না থাকায় তাঁর মনোনয়নে দলের অনেক নেতা অসন্তুষ্ট হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক নেতা বলেন, যদি বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী না হন, তাহলে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফয়জুল আনোয়ার আলাওর ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে পারেন। ঈদের আগে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর পোস্টার প্রার্থিতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ, এর আগে কখনো তাঁর এমন প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েনি।

তবে আওয়ামী লীগের ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে ফয়জুল আনোয়ার ছিলেন না। যোগাযোগ করলে গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুরোধ করছেন। আবার যেহেতু দল অন্য একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে, সেটাও একটা বিষয়। তবে সবদিক বিবেচনা করে পুরো বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাব।’

আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী না হন, সে জন্য দলের প্রবীণ নেতারা কাজ করছেন। বিশেষ করে মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে দেখা করে এবং মুঠোফোনে এ বিষয়ে আলাপ করেছেন বলে জানা গেছে। আনোয়ারুজ্জামান সম্প্রতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। তাই স্বাভাবিক কারণেই অনেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এর মধ্যে দল আমাকে বেছে নিয়েছে। দলের নির্দেশনা মেনে সিলেট আওয়ামীও ঐক্যবদ্ধ। দলের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না, এটা আমাদের বিশ্বাস।’

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলটির মনোনয়নে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরীরও এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা আছে। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির সদস্য। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে দলটি নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছে। 

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে ২ এপ্রিল যুক্তরাজ্যে যান আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে ১৬ এপ্রিল সিলেটে ফিরে আরিফুল গণমাধ্যমে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর কাছ থেকে নির্বাচন নিয়ে ‘সংকেত’ পেয়েছেন।

আরিফুল হক গত রোববার বলেন, ‘আমার দল যৌক্তিক কারণেই বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আমি এটাকে সমর্থন করি। তবে যেহেতু এই নগরের ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে টানা দুবার নির্বাচিত করেছেন, তাই তাঁদের মতামতও দলের মতোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে ভোটার, শুভানুধ্যায়ী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার মতামত জানতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। এরপরই প্রার্থিতা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করব।’

বিএনপির নেতা বদরুজ্জামান সেলিম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেছেন, আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাঁরও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা রয়েছে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তাই তাঁদেরও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।