কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের সব কটি দানবাক্সের টাকা গণনা শেষে এবার পাওয়া গেছে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এ ছাড়া পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। আজ শনিবার দিনভর প্রায় ১২ ঘণ্টা এ গণনা চলে। পাগলা মসজিদের ৯টি লোহার সিন্দুকের ২৮ বস্তা টাকা গণনা করেন প্রায় সাড়ে ৩০০ লোক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুটি মাদ্রাসার ২৫০ জন শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ জন কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ৩৫০ জন ১২ ঘণ্টাব্যাপী টাকা গণনার কাজ করেন। টাকা গণনা শেষে রূপালী ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকার পতনসহ প্রায় দেড় মাস দেশের নানা পরিস্থিতির কারণে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন পাগলা মসজিদে তুলনামূলক কম এসেছেন। সে জন্য গতবারের তুলনায় টাকা কিছুটা কম পাওয়া গেছে। তবে এবার খোলাও হয়েছে গতবারের চেয়ে কিছুটা আগেভাগে।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের সিন্দুকগুলো তিন থেকে চার মাস পর খোলা হয়। এর আগে ২০ এপ্রিল খোলা হয়েছিল দান সিন্দুকগুলো। তখন ২৭টি বস্তার মধ্যে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া যায়; যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।
পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যাঁরা দান করতে আসেন, তাঁরা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাঁদের আশা পূরণ হয়েছে। এ কারণেই দিন দিন দানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, সকাল থেকে টাকার সিন্দুক খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংক পর্যন্ত সব টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া গণনার দিন ছাড়াও বাকি দিনগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন সিন্দুক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি এবার সেনাবাহিনীর একটি দল টাকা গণনার কাজে সহায়তা করেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ছয়তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প করা হবে। এতে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধলাখ মুসল্লি যাতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন, এ রকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকৌশলীরা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। কাজ শুরু হলে খরচ বাড়তেও পারে। তিনি আরও জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়ে থাকে।