ডেঙ্গু রোগীদের এক জায়গায় না রেখে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগও হয়নি।
খুলনায় দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঈদের আগে যেখানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গড়ে দুজন করে রোগী ভর্তি ছিলেন, সেখানে এখন ভর্তি রয়েছেন ১৯ জন। তবে অধিকাংশ রোগীই ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বসবাস করেন। ঈদে বাড়ি এসে তাঁরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড করা হয়নি। ওই রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৫টি ইউনিটে রেখে। এ কারণে রোগীরা এক জায়গায় না থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগও হয়নি। সব ওষুধ রোগীদেরই কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের একেক দিন একেকটি মেডিসিন ইউনিটে রোগী ভর্তি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই হাসপাতালের মেডিসিনের ৫টি ইউনিটে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৯ জন।
এর মধ্যে ৪ জনই ভর্তি হয়েছেন আগের দিন বুধবার। এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন। চলতি বছর এই হাসপাতালে ৫৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে কোনো মৃত্যুর ঘটনা নেই।
বর্তমানে হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-১-এ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ২ জন, ইউনিট-২-এ ভর্তি রয়েছেন ৬ জন, ইউনিট-৩-এ ভর্তি রয়েছেন ৫ জন এবং ইউনিট-৪ ও ইউনিট-৫-এ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ৩ জন করে।
গত বছর এই হাসপাতালের চতুর্থ তলায় নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছিল। ১৪ শয্যার ওই দুটি ওয়ার্ড এবার প্রায় ফাঁকাই পড়ে আছে। ওই ওয়ার্ড হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৫-এর একটি অংশ। মেডিসিন ইউনিট-৫-এর সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসক মোহাইমিনুল হক বলেন, পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড গঠন না হলেও ৫ নম্বর ইউনিটে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের পৃথক রাখা হচ্ছে ওই দুটি ওয়ার্ডে। সেখানে ছয় শয্যার পুরুষ ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন দুজন, দুজনই শ্রমিক। আর নারী ওয়ার্ডে একজন ভর্তি থাকলেও গতকাল তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
৫ নম্বর ইউনিটে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী মো. ইয়াদ আলী (৫২) এসেছেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে। তিনি বলেন, ঈদের প্রায় এক মাস আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ঈদের আগের রাতে বাড়ি আসেন। সকালে ঈদের নামাজ পড়ার পর জ্বর জ্বর বোধ করতে থাকেন। তবে ওই জ্বর স্বাভাবিকের মতো ছিল না। মাথা যন্ত্রণা, পুরো শরীর ব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, তাঁর ডেঙ্গু হয়েছে। গত মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
আরেকজনের নাম সাইফুল ইসলাম (১৮)। বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায়। তিনিও মঙ্গলবার ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সাইফুল কাজ করতেন চট্টগ্রামে।
জানতে চাইলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে রোগী বেড়ে যাওয়ায় আপাতত মেডিসিন ইউনিটে রোগী ভর্তি করে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রোগী বাড়তে থাকলে আলাদা ওয়ার্ড করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কর্নার করা হয়েছে।
পরিচালক বলেন, হাসপাতালে ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামে বরাদ্দ অনেক কম। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে সব সময় প্রায় দেড় হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। এ কারণে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। তারপরও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সাধ্যমতো ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাতে আরও বেশি রোগী ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে খুলনা সিটি করপোরেশনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।