মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন প্রত্যাহারের দাবিতে পাঁচ প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন। আজ সোমবার সকালে জামালপুর শহরের একটি রেস্তোরাঁয়
মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন প্রত্যাহারের দাবিতে পাঁচ প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন। আজ সোমবার সকালে জামালপুর শহরের একটি রেস্তোরাঁয়

এক প্রার্থীকে ‘দলীয় সমর্থনের’ প্রতিবাদ অন্য পাঁচ প্রার্থীর

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অন্তত সাত নেতা। এর মধ্যে একজনকে ‘দলীয় সমর্থন’ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অন্য পাঁচ প্রার্থী।

তৃণমূলের ‘তথাকথিত ভোটের’ আয়োজন করে প্রার্থী নির্বাচন করায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে দুষছেন তাঁরা। যদিও মির্জা আজম তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জামালপুর-৩ (মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ) আসনের সংসদ সদস্য।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগমী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে।

‘দলীয় সমর্থন’ প্রত্যাহারের দাবিতে জামালপুর শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আজ সোমবার সকালে ‘মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী’র ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত থাকা পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আলামিন, মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান রহমতুল্লা, আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. ফরিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান রায়হান রহমতুল্লা। তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা প্রতীক না দিয়ে উন্মুক্ত ঘোষণা করেছেন। এর পর থেকে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ‘দুর্নীতিবাজ’ বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমানকে চতুর্থবারের মতো চেয়ারম্যান বানানোর জন্য গত ৯ মার্চ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় ঐকমত্য না উন্মুক্ত নির্বাচন হবে, এই প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সেই সভায় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগ সদস্য ও অন্য প্রার্থীরা উন্মুক্ত নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। এ অবস্থায় মির্জা আজম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তৃণমূলের ভোটের প্রস্তাব করেন। তখন একজন ছাড়া সব প্রার্থী ভোটের জন্য সময় চান। কিন্তু মির্জা আজম সময় না দিয়ে ভোটের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এমন অবস্থায় অন্য পাঁচ প্রার্থী তৃণমূলের ভোটে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর দুই প্রার্থী তথাকথিত প্রহসনের ভোটে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ওবায়দুর রহমানের আজ্ঞাবহ নেতাদের প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ব্যালটে সিল মারা শুরু করেন। অপর প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন জাল ভোটের প্রতিবাদ করেন। পরে ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি ওই ভোট বর্জন করেন। পরে চেয়ারম্যান পদে ওবায়দুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে শফিকুল ইসলাম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লাইলী আক্তারকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, এর পর থেকে ষড়যন্ত্র ব্যাপক আকার ধারণ করে। অন্য প্রার্থীদের পক্ষে না থাকতে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। তাতে কাজ না হওয়ায় সবাইকে বহিষ্কারের ভয় দেখানো হয়। এমনকি চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার অপরাধে রায়হান রহমতুল্লাকে একটি হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। অন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ভয়ভীতিসহ বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য এবং উন্মুক্ত ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই পাঁচ প্রার্থী।

হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই দাবি করে সংসদ সদস্য মির্জা আজম বলেন, তৃণমূলের ভোটে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। অন্যরা ইচ্ছা করলে প্রার্থী হতে পারবেন। তাঁরা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মতো করে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা করছেন। কোনো সমস্যা তাঁদের হয়নি। যেহেতু কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে উন্মুক্ত নির্বাচনের। সে কারণে কেউ প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেননি। কারও পক্ষে ভোটও চাননি। প্রার্থীদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।

তৃণমূলের ভোটের বিষয়ে মির্জা আজম বলেন, ‘মাদারগঞ্জে তৃণমূলের ২ হাজার ৭০০ নেতা-কর্মীকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছি, কে প্রার্থী হবেন, সেটা ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হোক। সে অনুযায়ী ১৯ জন প্রার্থী ছিল। যখন পুরো সিদ্ধান্তটি ভোটের মাধ্যমে দিয়েছি, তখন পাঁচজন ভোটে অংশ নেননি। একজন ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের অবস্থা দেখে তিনি ভোট বর্জন করে চলে যান। আমার সিদ্ধান্ত ছিল, যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনি দলীয় সমর্থন পাবেন। আমি একক প্রার্থী ঘোষণা করিনি।’