কুম্ভকর্ণের ৬৫ ফুট দীর্ঘ ঘুমন্ত মূর্তি, সেই সঙ্গে আছে হিন্দু পুরাণের চার যুগের বিভিন্ন কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ৫০১টি প্রতিমা। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ঘিরে এই আয়োজন বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়িতে।
করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর আয়োজন বন্ধ থাকার পর এবার বড় পরিসরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার জমকালো আয়োজন শুরু হয় শিকদারবাড়িতে। সেই থেকে প্রতিবছর মহা ধুমধামে পূজা হয়ে আসছে এখানে। ২০১৯ সালের দুর্গোৎসবে এখানে ৮০১টি প্রতিমা করা হয়।
এই মণ্ডপে এবারের নতুন আকর্ষণ ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের কুম্ভকর্ণের মূর্তি। চার মাসের বেশি সময় ধরে ১৫ জন প্রতিমাশিল্পী এই মণ্ডপের ৫০১টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। দর্শনার্থীরা যেন প্রতিমাগুলোকে সহজে দর্শন করতে পারেন, সে জন্য এগুলোকে কয়েকটি সারিতে সাজানো হয়েছে।
শারদীয় দুর্গোৎসবে বাগেরহাটে ৬৫২টি মণ্ডপে পূজা হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজ। বাগেরহাট জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কুমার দাস বলেন, শুক্রবার ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। এ বছর জেলায় ৬৫২টি মণ্ডপে পূজা হবে। সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিয়ে বড় পূজা হচ্ছে শিকদারবাড়িতে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব করতে পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতাদের নিয়ে একাধিক সভা করা হয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। পাশাপাশি র্যাবের টহলও থাকবে।
শিকদারবাড়ির পূজামণ্ডপের প্রতিমাশিল্পী বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় বলেন, ‘২০১৯ সালে এই মণ্ডপে ৮০১টি প্রতিমা তৈরি করি। করোনার কারণে গত তিন বছর পূজা বন্ধ ছিল। এ বছর আবার বড় পরিসরে পূজা হচ্ছে। চার যুগের দেব-দেবীর ৫০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের রংতুলি ও সাজসজ্জার কাজও শেষ হয়েছে। আশা করছি, এবারও এই মণ্ডপে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক দর্শনার্থী আসবেন।’
পূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, ‘২০১০ সালে ১৬৫টি প্রতিমা দিয়ে এখানে প্রথম দুর্গোৎসব শুরু হয়। সবশেষ ২০১৯ সালে ৮০১টি প্রতিমায় পূজা হয়। এ বছর ৫০১টি প্রতিমা দিয়ে নতুন করে আবার শুরু করছি। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি নিয়ে চার যুগে যত দেব–দেবী ও অবতার পৃথিবীতে এসেছেন, তাঁদের সমন্বয়ে এসব প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে; যা দেখে সবাই আনন্দিত হবেন। সবাইকে এই পূজা দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. রাসেলুর রহমান বলেন, পূজাকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। আয়োজন ও লোকসমাগমের দিক দিয়ে জেলার ২১৬টি পূজামণ্ডপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।