মুক্তি পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরলেন ঋণসংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার ১২ কৃষক

কারাগার থেকে মুক্তির পর ছেলে জুয়েল রানার সঙ্গে আলাপ করছেন কৃষক আকরাম প্রামাণিক। আজ রোববার বিকেলে পাবনা জেলা কারাগারের ফটকে
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার ঈশ্বরদীতে ঋণসংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার সেই ১২ কৃষক কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দুই দিন বন্দী থাকার পর আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পাবনা জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা।

এর আগে রোববার দুপুরে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মো. শামসুজ্জামান ওই ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কারাগারে থাকা ১২ জনসহ ওই মামলার আরও ২৫ আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এরপর আদালত ৩৭ জনকেই জামিন দেন। দুপুরে ২৫ জন জামিন পেয়ে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া কারাগারে থাকা ১২ জন বিকেল সাড়ে ৪টার পর ছাড়া পেয়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। এই জামিনের পর কৃষকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।

জামিন লাভের পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন কৃষকেরা। আজ রোববার দুপুরে পাবনা জেলা জজ আদালত চত্বরে

মুক্তি পাওয়া কৃষকেরা হলেন ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারি গ্রামের আলম প্রামাণিক (৫০), মাহাতাব মন্ডল (৪৫), কিতাব আলী (৫০), হান্নান মিয়া (৪৩), মোহাম্মদ মজনু (৪০), মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০), আবদুল গণি মণ্ডল (৫০), শামীম হোসেন (৪৫), সামাদ প্রামাণিক (৪৩), নূর বক্স (৪৫), মোহাম্মদ আকরাম (৪৬) ও মোহাম্মদ রজব আলী (৪০)। তাঁরা সবাই প্রান্তিক কৃষক।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের একটি দলকে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে তৎকালীন ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নামে মামলা করেন। ২৩ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। ২৫ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত পরোয়ানাভুক্ত ৩৭ জনের মধ্যে ১২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।

কৃষক ও তাঁদের পরিবারের দাবি, ঋণ গ্রহণের পর এক বছরের মাথায় অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা তাঁদের ঋণ পরিশোধ করেছেন। তাঁদের পাস বই ও জমা স্লিপও আছে। অথচ সেই অর্থ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। ফলে তাঁদের এই হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

জামিনে মুক্তির পর আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমি ৪০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। আমরা অতিদরিদ্র হওয়ায় টাকা পরিশোধ করতে পারি নাই।’

বিকেলে জামিনে পাবনা কারাগার থেকে বের হন কিতাব আলী ও হান্নান মিয়া। তাঁরা বলেন, সেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অধিকাংশ টাকা পরিশোধ করার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাঁরা মাঠে-ময়দানে খেটে খাওয়া দিনমজুর হওয়ায় বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি। সেদিন তাঁরা গাজরের খেতে কাজ করছিলেন। এমন সময় সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার বাদী বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বলেন, কৃষকেরা ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা করা হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে এটা চলমান প্রক্রিয়া।