চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। তবে চুয়াডাঙ্গায় আজ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস চলছে।
শৈত্যপ্রবাহকেন্দ্রিক শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা নিয়ে জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের পৃথক ঘোষণা ও সমন্বয়হীনতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা আঞ্চলিক ফোকাল পারসনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেখানে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকে কেন বারবার দুই রকম সিদ্ধান্ত আসছে, সে বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার জেলার তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। শৈত্যপ্রবাহকে কেন্দ্র করে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের দুই রকম সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান প্রথম আলোকে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, জেলায় যেসব বিদ্যালয়ে দুই পালা (শিফট) চালু আছে, সেখানে সকাল সাড়ে সাতটায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। আবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার খবর সকাল ছয়টায় প্রথম রেকর্ড করা হয়। এই অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ছুটির খবর জানানো সম্ভব নয়। তাই যেদিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকবে, তার পরদিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে। এমনকি ওই দিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে থাকলেও কোনো ক্লাস হবে না।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দাবি করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক খো. রুহুল আমীনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের জানানো হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনেই আজ জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে এবং শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি বিশেষভাবে তদারক করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে। সূর্য না ওঠায় ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে পারছে না। সেই সঙ্গে উত্তর থেকে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাসের কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভিজে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয় দুই পালায় পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠান দুটিতে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। আজ দুটি প্রতিষ্ঠানেই স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে।
সকাল সাতটার দিকে ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকে কথা হয় অভিভাবক লাবনী খাতুনের সঙ্গে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সাদ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে শীতের ভেতর কাঁপতে কাঁপতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্কুলে ছুটি। সকাল থেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। ছেলেকে নিয়ে এসে দেখি ক্লাস হবে।’
বিদ্যালয়ের সামনে ১৫ মিনিট অবস্থান করে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ে। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা অফিস থেকে ছুটির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে তীব্র শীতের কথা ভেবে প্রভাতি শাখায় শ্রেণি কার্যক্রম ৭টা ৪৫ মিনিটের পরিবর্তে আজ থেকে ৮টা ১৫ মিনিটে নেওয়া হচ্ছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।’
শহরের ঝিনুক বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. শেফালী খাতুন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনা মেনে আজ শৈত্যপ্রবাহের কারণে সব শ্রেণিতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েও আজ সকালে শীতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসতে দেখা যায়। বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অর্দৃতা অধিকারী বলে, ‘শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরাও চাই, সরকারি নিয়ম আমাদের বিদ্যালয়েও যথাযথভাবে পালন করা হোক।’ একই শ্রেণির ছাত্রী ফাবিহা লামিছার ভাষ্য, ‘শীতকালে মর্নিং শিফটের ক্লাস সকাল সাড়ে ৭টার পরিবর্তে ৯টায় নেওয়া যায় কি না, তা ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।’