ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন

৯২ ঘণ্টা পর আসিফের সন্ধানে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্ত্রীর আবেদন

আবু আসিফ আহমেদ
আবু আসিফ আহমেদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের নিখোঁজের ৯২ ঘণ্টা পর তাঁর সন্ধানে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন তাঁর স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহরীন।

আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদনটি পাঠান মেহরীন। আবেদনে তিনি স্বামীর সন্ধানসহ উপনির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

আবেদনের অনুলিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। তাঁর নিখোঁজে নির্বাচনে সাত্তারের বিজয়ের পথ একেবারেই পরিষ্কার হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইমান আলী নামের একজনের মাধ্যমে আসিফের নিখোঁজের বিষয়ে তাঁর স্ত্রী একটি লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পাঠিয়েছেন। অভিযোগটি জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়ায় কথা জানিয়েছেন তিনি।

লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মোটরগাড়ি প্রতীক বরাদ্দের পর আশুগঞ্জ ও সরাইলে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন আবু আসিফ আহমেদ। তিনি ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছিলেন। কিন্তু ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে আশুগঞ্জ বাজারের বাসায় মুঠোফোন রেখে তিনি বের হয়ে যান। আর ফেরেননি। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন

আবেদনে বলা হয়, ২৫ জানুয়ারি বুধবার দিবাগত রাতে আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধানের দায়িত্বে থাকা মুসা মিয়াকে (৮০) বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৩ জানুয়ারি আশুগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যে ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে মুসার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী মেহেরুননিছার ছোট ভাই শাফায়াত সুমন (৩৮) ভয়ভীতির কারণে নির্বাচনী এলাকায় আসতে পারছেন না। এর মধ্যে পুলিশ পরিচয়ে সাদাপোশাকধারী লোকজন বাসায় অযথা তল্লাশি করে হয়রানি করছে। প্রতিনিয়ত আসিফের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির সামনে কিছু পুলিশ আসা-যাওয়া করছে। বাসায় কোনো লোক এলে তাঁর ছবি তুলছে, ভিডিও করছে।

মেহেরুননিছা আরও উল্লেখ করেন, ‘প্রচারণা ক্ষেত্রে আমরা কোনো লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড পাইনি। ভোটকেন্দ্রে যাঁদের এজেন্ট দেব, তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। একজন প্রার্থীকে (সাত্তার) যেভাবেই হোক জিতিয়ে নেওয়া হবে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে করি না। সুষ্ঠু ভোট হলে আমার স্বামী আবু আসিফ আহমেদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।’

আবেদনে সরাইলের কুট্টাপাড়া পূর্ব, কুট্টাপাড়া পশ্চিম, সৈয়দটুলা, গরের পাড়, আবিথটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও উচালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি ভয়ে স্বামীর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেন। স্বামীর সন্ধানসহ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে মেহেরুননিছার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফুফু হিরা বেগম বলেন, মেহেরুননিছা বাসায় নেই। আসিফের সন্ধানে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

তবে মেহেরুননিছা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘কী করব, কীভাবে করব, বুঝতে পারছি না। বাসার চার পাশে সাদাপোশাক পরা লোকজন ঘোরাফেরা করছে। তারা ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে চাচ্ছেন না। মনে হচ্ছে, কোনো কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারব না।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আসিফের নিখোঁজের বিষয়ে তাঁরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তাঁর বাসার সামনে তাঁদের কোনো লোকজন নেই। আর তাঁর স্ত্রীকে নজরদারির প্রয়োজন তাঁদের নেই।  তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো আসিফের খোঁজ পাইনি। তবে সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি।’

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। ওই প্রার্থীর স্ত্রী প্রশাসন ও পুলিশের কাছে কেন অভিযোগ করছেন না? কেউ তো তাঁকে হয়রানি করছেন না। কর্মীদের ভয় দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ, সব প্রার্থীর লোকজন তাঁর কার্যালয় থেকে এজেন্টদের কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন।