মসজিদ থেকে নামাজ শেষে ফেরার পথে হামলায় আহত ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু আওয়ামী লীগের কর্মী রবিউল ইসলামের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান। রাতেই তাঁর লাশ ঝিনাইদহে নিয়ে আসা হয়েছে। এর আগে গতকাল বিকেলে হরিণাকুণ্ডু শহরের হাসপাতাল মোড়ে একদল সন্ত্রাসী রবিউল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে নিহত রবিউলের পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের ছয়টি বাড়ি ও দুটি খড়ের গাদায় আগুন দেন। এ ঘটনায় রনি নামের এক তরুণ আহত হয়েছেন।
নিহত রবিউল ইসলাম হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ইতিপূর্বে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের আক্কাচ আলী ও রবিউল ইসলামের মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে আক্কাচ আলীও প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছিলেন।
নিহত রবিউল ইসলামের জামাতা রাসেল হোসেন বলেন, তাঁর শ্বশুরকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যায় অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকায় রওনা হলে পথে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছালে রাত ১০টার দিকে তাঁর শ্বশুর মারা যান।
এদিকে রবিউল ইসলামের মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত রবিউলের পক্ষের লোকজন গতকাল রাত ১০টার দিকে প্রতিপক্ষের ৬টি বাড়িতে ও ২টি খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেন। এতে আক্কাচ আলী, আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর ভাই ভুলু, শিলু, টানুসহ ছয়জনের বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। এ সময় আক্কাচ আলী ও আনোয়ার হোসেনের দুটি খড়ের গাদায়ও আগুন দেওয়া হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে নিহত রবিউল ইসলামের ভাগনে রনিকে (২৫) প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে আহত করেন। তাঁকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনে তিন লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন।
স্থানীয় পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল বিকেলে হরিণাকুণ্ডু শহরের হাসপাতাল এলাকার মসজিদ থেকে নামাজ শেষে ফেরার পথে হাসপাতাল মোড়ে একদল সন্ত্রাসী রবিউল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। বিরোধের জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা সবাই চিহ্নিত ব্যক্তি। হামলার ঘটনা দিনের বেলায় হওয়ায় সবাই তাঁদের দেখেছেন। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুস সালাম বলেন, আগুনে বেশ কয়েকটি ঘর ও দুটি খড়ের গাদা পুড়েছে। তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আক্তারুজ্জামান লিটন বলেন, বর্তমানে এলাকায় পুলিশ টহল রাখা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।