রাতের বেলা বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে বাড়ির এক লোক দেখতে পান, সেখানে শুয়ে আছে বাঘের মতো দেখতে একটি প্রাণী। সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। আটকা পড়ে প্রাণীটি। এরপর বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বাঘের আতঙ্ক। রাতভর তাঁরা সেই আতঙ্কেই কাটান।
গতকাল রোববার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের রামভদ্রপুর গ্রামের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এরপর আজ সোমবার দুপুরে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লোকজন উপস্থিত হয়ে বাথরুমের দরজা খুলে দিতেই প্রাণীটি মুক্তির আনন্দে এক দৌড়ে ছুটে যায়। প্রাণীটি ছিল সংকটাপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত মেছো বাঘ।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত ১১টার দিকে রামচন্দ্রপুর গ্রামের এক ব্যক্তি বাড়ির বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে বাঘের মতো একটি প্রাণীকে শুয়ে থাকতে দেখে আতঙ্কে দরজা বন্ধ করে দেন। বাঘ ভেবে আতঙ্কে রাত কাটান বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা। আজ সকালে স্থানীয় এক ব্যক্তি খবরটি বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানালে দুপুর ১২টার দিকে বিভাগের কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে যান। তাঁরা বাথরুমের দরজা খুললে মেছো বাঘটি এক দৌড়ে বাড়ির পুকুরপাড় ধরে ধানখেতের দিকে ছুটে যায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সারোয়ার, মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার প্রমুখ।
বন্য প্রাণী গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বিশ্বেই মেছো বাঘ এখন একটি সংকটাপন্ন প্রাণী। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর সংগঠনÑআইইউসিএন মেছো বাঘকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাণীটি বাংলাদেশেও বিপন্ন। প্রাকৃতিক জলাভূমি কমার কারণে এদের সংখ্যা কমে আসছে। অথচ কোনো জলাভূমির আশপাশে মেছো বাঘ থাকলে, সেখানে মাছের পরিমাণ বাড়ে। মেছো বাঘ বেশির ভাগ সময়ই মরা ও রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে জলাশয়ে মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাথরুমের দরজা খুলে দিতেই মেছো বাঘটি ধানখেতের দিকে চলে গেছে। এটিকে বাঘ ভেবে স্থানীয় লোকজন ভয় পাচ্ছেন। তাঁদের কাউন্সেলিং করা হয়েছে। লিফলেট দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বলে এসেছি, এটা একটা নিরীহ প্রাণী। বাঘ মনে করে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’