বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে এখনো পানি ঢুকছে। এতে ঘরবাড়ি ও ফসল নষ্ট হচ্ছে। এসব ভাঙা বাঁধ মেরামতের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহা. রফিকুল ইসলাম ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিঞা আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে ভাঙা বাঁধের স্থান পরিদর্শন করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বরগুনায় আট ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি পয়েন্টে ২ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি ভেঙে গেছে। বরগুনা সদর উপজেলার গুলিশাখালী, বাওয়ালকার, জাঙ্গালিয়া; পাথরঘাটার কালমেঘা, মাদারতলী; আমতলীর পশুর বুনিয়া, ছোপখালীসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বিষখালী নদীর তীরবর্তী গুলিশাখালী, বাওয়ালকার, কুমড়াখালী গ্রামের ৬টি স্থানে প্রায় ৪০০ ফুট বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই বাঁধের অভ্যন্তরের ৭ গ্রামের ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধ ছিল। এর প্রস্থের দুই-তৃতীয়াংশ জোয়ারের পানির তোড়ে বিষখালী নদীতে বিলীন হয়ে বাঁধ সরু হয়ে গেছে। যেকোনো সময় বাঁধের বাকি অংশ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। এ ছাড়া ঘের ও পুকুরের মাছ পানির স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে নদীতে পানি বাড়ায় আমাদের এলাকার বাঁধের তিন ভাগের দুই ভাগ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। আমাদের এই এলাকায় সবাই এসে প্রতিশ্রুতি দেন বাঁধের, কিন্তু বাঁধ হয় না।’
গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় শুরুর কিছু সময় পর আমরা দেখতে পাই, আমাদের বাঁধ ভেঙে শোঁ শোঁ শব্দ করে ভেতরে পানি ঢুকে পড়ছে। আমরা সবাই ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করি। এর কিছু সময়ের মধ্যে পানিতে আমাদের গ্রাম তলিয়ে যায়। আমরা জীবন বাঁচাতে কাঠের ঘরের দোতলায় অবস্থান করি। এখন প্রতিবার জোয়ারে আমাদের এই গ্রামে বিষখালী নদীর পানি ঢুকতে আছে। এখানে আমাদের ডিসি স্যার, ইউএনও স্যার আসছিলেন। ডিসি স্যার অল্প সময়ের মধ্যে এই ভাঙা বাঁধ মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েরা এই পথ দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে।’
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আমাদের এলাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এত বড় বন্যা আমার জীবনে দেখি নায়। সিডরেও এমন অবস্থা হয়নি। মনে হয়েছিল, বাঁচব না। আমাদের বাঁচাতে হলে এই ভাঙা বাঁধ দ্রুত মেরামত করা দরকার। বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।’
বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ‘ঝড়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে আমার এলাকার একটি বাঁধের ছয়টি স্থানে ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে সাত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।’
পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাত থেকে আট ফুট উচ্চতার জোয়ার প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে জেলার ১৮টি পয়েন্টে প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এসব ভাঙা স্থান মেরামতের কাজ শুরু করেছি।’
ডিসি মোহা. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভেঙে যাওয়া বাঁধের স্থান আমি দেখে এসেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ভাঙা বাঁধের স্থান মেরামতের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ভাঙা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে মেরামতের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’