খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস। আজ সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানান।
জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের নির্দেশনায় মেয়র পদে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান গফ্ফার বিশ্বাস। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে খুলনা সিটিতে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীর প্রতিও তাঁর সমর্থন থাকবে না।
গফ্ফার বিশ্বাস বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন না পেলেও খুলনার প্রতি মমত্ববোধ থেকে আমি মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। নির্বাচনের জন্য আমার সব প্রস্তুতি ও সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ আমাকে সিটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে অনুরোধ করেছেন। ইতিমধ্যে আমাকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় দশম জাতীয় সম্মেলনের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে। বেগম রওশন এরশাদের নির্দেশনায় আমি মেয়র পদে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলামকে সমর্থন করবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে গফ্ফার বিশ্বাস বলেন, ‘দলের মধ্যে নানা বিভেদ রয়েছে। আমাদের মত নিয়ে প্রার্থী ঠিক করা হয় না। খুলনা সিটিতে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর প্রতি আমার সমর্থন থাকবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ১৯৯৪ সালের খুলনা সিটির প্রথম নির্বাচন, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৪ সালে জাপা প্রার্থী এস এম এ রব ৪২ হাজার ভোট পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর ২০১৩ ও ২০১৮ সালে মেয়র প্রার্থী পদে দলের পক্ষ থেকে যাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাঁদের একজন ৩ হাজার ৩৩ ভোট ও অপর প্রার্থী ১ হাজার ৭২ ভোট পান। দলের অন্তঃকোন্দল ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর জাতীয় পার্টির নেতা মোল্লা শওকত হোসেনসহ গফ্ফার বিশ্বাসের অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা নগরের প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে নূরনগর এলাকার ‘বিশ্বাস পরিবার’ অন্যতম। সেই পরিবারের সদস্য আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস। তাঁর ভাই সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বুলু বিশ্বাস নগরের সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর দুই ভাগনে ও দুই জামাতা সিটি করপোরেশনের বর্তমান কাউন্সিলর।
গত ৩০ এপ্রিল খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র তোলেন দীর্ঘ সময় সরাসরি রাজনীতির বাইরে থাকা আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন গফ্ফার বিশ্বাস। তখন তিনি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও খুলনা মহানগরের সভাপতি। ১৯৮৮ সালে খুলনা-৩ আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। খুলনা মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। এক-এগারোর পর প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে যান।
আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস বর্তমানে খুলনা কেডিএ নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতি, খুলনা আন্তজেলা মোটর বাস মালিক সমিতি ও ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা।