সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা কাল অনুষ্ঠিত হবে। নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে গাইবান্ধায় তৎপর হয়ে উঠেছে ‘ডিভাইস ও কন্ট্রাক্ট পার্টি’। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে এবং চুক্তিভিত্তিক পরীক্ষাকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ (হল কন্ট্রাক্ট) নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনের আশঙ্কা করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় সহকারী শিক্ষক পদে প্রায় ৭০০টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩০ হাজার ৮৮ জন চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেছেন। কাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে মোট ৪৭টি কেন্দ্রে ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
‘কন্ট্রাক্ট পার্টির’ অনেকে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে জানিয়ে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের কাছে কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশী ফোন করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, পরীক্ষা ঘিরে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রটি টাকার বিনিময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের কক্ষ চুক্তিতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে তারা যেসব কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। চক্রটি পরীক্ষা চলাকালে ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও সমাধানের নীলনকশা আঁকছে বলে তাঁরা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, তাঁরা সারা বছর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। চাকরির জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এখন দেখছেন, অনেকে লাখ টাকার বিনিময়ে ডিভাইস ও পরীক্ষার কক্ষের কন্ট্রাক্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এতে তাঁদের মতো সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের দাবি, প্রশাসন চক্রটিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনুক।
নিয়োগ পরীক্ষা হবে—এমন একটি কেন্দ্রের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি চক্র তাঁকেও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে। চক্রটি জানিয়েছে, তারা ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে। তাঁদের লোকদের যেন পরীক্ষার হলে সুবিধা করে দেওয়া হয়, এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু কতজন প্রত্যাখ্যান করবেন, সেই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আরশাদ মুঠোফোনে বলেন, চক্রের বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আগেও এ ধরনের ঘটনা দু-একটা ঘটনা ঘটেছে। তাই তাঁরা আগাম পদক্ষেপ হিসেবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানিয়েছেন। গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) জানিয়েছেন, সুষ্ঠুভাবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে।
চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন ব্যস্ত থাকায় দুর্নীতিবাজ চক্রটি সুযোগটি কাজে লাগাতে চাইছে। প্রশাসন কঠোর নজরদারির পাশাপাশি প্রয়োজনে পরীক্ষার দিন কেন্দ্রের আশপাশে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক সীমিত করে দিলে চক্রটির অপকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। প্রশাসনের সতর্কতায় মেধাবীরা শিক্ষকতার মতো পেশায় আসার সুযোগ পাবেন। অন্যথায় অনেকে যোগ্য হয়েও চাকরির পরীক্ষায় টিকতে পারবেন না।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রের দরজা বন্ধ রাখা হবে। ফটক থেকেই প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে চেক করে ভেতরে প্রবেশ করানো হবে। কক্ষে কারও কাছে ডিভাইস পাওয়া গেলে তাঁকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।