মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় গৃহকর্মী এক কিশোরীকে (১৫) ধর্ষণ ও এই কাজে সহায়তার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা, ওই কিশোরীর মা এবং স্থানীয় একজন বাসিন্দা আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার বিকেলে জুড়ী থানায় মামলা করেছিল ওই কিশোরী।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরের দিকে ওই কিশোরী একা থানায় গিয়ে কেঁদে কেঁদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে ধর্ষণের ঘটনাটি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ব্যবসায়ী শামসুজ্জামান ওরফে রানু (৬০), কিশোরীর মা (৪০) ও উপজেলার এক বাসিন্দা শফিকুল ইসলামকে (৪০) আটক করে। পরে কিশোরীর করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরীর বাবা বেঁচে নেই। আটক শফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা শামসুজ্জামানের পূর্বপরিচিত। তাঁর (শফিকুল) সহযোগিতায় কিশোরীর মা প্রায় তিন মাস আগে শামসুজ্জামানের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে যান। বাসায় শামসুজ্জামান একা থাকেন। তাঁর দুই স্ত্রীর একজন সিলেট নগরে এবং আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এ দিকে বাসার মালিকের পরামর্শে কিশোরীর মা কাজে সহযোগিতার জন্য মাসখানেক আগে মেয়েকে সেখানে নিয়ে যান। এ সময় মালিক মেয়েকে ধর্ষণ করেন। কিশোরী তার মাকে ঘটনাটি জানালেও মা চুপ থাকেন। এরপর ওই বাসা থেকে পালিয়ে অন্যত্র কাজে চলে যায় কিশোরী। শামসুজ্জামান পরে শফিকুলের সহযোগিতায় আবারও কিশোরীকে খুঁজে বের করে আনেন। বাসায় যাওয়ার পর কিশোরীর ওপর আর নির্যাতন চালানো হবে না বলে মালিক কথা দেন। কিন্তু গত ১ মার্চ আবারও তিনি কিশোরীকে কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এরপর কিশোরী বাসা থেকে আবারও পালায়। গতকাল দুপুরের দিকে সে একা জুড়ী থানায় গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওসিকে ঘটনাটি জানায়।
জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরীর মা যৌন নির্যাতনে সহায়তার কথা স্বীকার করেছেন। অভাব-অনটনের কারণে টাকার লোভে এ রকম করেছেন বলে জানান। তবে শামসুজ্জামান অপরাধ অস্বীকার করেছেন। তিন আসামিকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান এসআই সিরাজুল।
আওয়ামী লীগ নেতা শামসুজ্জামান পুলিশের হেফাজতে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শামসুজ্জামানের দুজন প্রতিবেশী বলেন, শামসুজ্জামান এ কাজ করবেন, সেটা তাঁদের বিশ্বাস হচ্ছে না। ঘটনাটি ‘চক্রান্ত’ হতে পারে বলে তাঁদের সন্দেহ।
আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সভাপতি মাসুক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনে যা হওয়ার তা হবে। কেউ অপকর্ম করলে দল এর দায় নেবে না।’