নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দীতে বিলের পানিতে ডুবে জোবায়ের আহমেদ (৮) ও হুসাইন আহমেদ (৬) নামের দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা এলাকার মাছিমপুর বিলে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। দুই ছেলেকে হারিয়ে মা শাহেদা আক্তারের কান্না থামছেই না।
মারা যাওয়া জোবায়ের ও হুসাইন শিলমান্দী ইউনিয়নের উত্তর বাগহাটা এলাকার মনির হোসেনের ছেলে। জোবায়ের ও হুসাইন স্থানীয় বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবারটি দীর্ঘদিন রাজধানী ঢাকায় থাকলেও সম্প্রতি বাগহাটা এলাকায় ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে। বাগহাটায় শ্বশুরবাড়ির পাশে জমি কিনে ওই ঘর তৈরি করেছিলেন পোশাক কারখানার কর্মকর্তা মনির হোসেন। ১৫ দিন ধরে তাঁরা সেখানে থাকছিলেন। গতকাল দুপুরে স্থানীয় কয়েকটি শিশুর সঙ্গে বাড়িসংলগ্ন মাছিমপুর বিলের পাড়ে খেলতে গিয়েছিল জোবায়ের ও হুসাইন। একপর্যায়ে তারা বিলের পানিতে গোসল করতে নেমে শালুক তুলছিল। ঘণ্টাখানেক পর অন্য শিশুরা উঠে এলেও হুসাইন পানিতে তলিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অন্য শিশুদের সঙ্গে জোবায়ের বাড়িতে এসে মা শাহেদা আক্তারকে জানায়, ‘অনেকবার ডেকেছি, কিন্তু হুসাইন আসছে না।’ তবে হুসাইন যে পানিতে তলিয়ে গেছে, তা সে মাকে জানায়নি। শাহেদা ভেবেছিলেন, ছেলে খেলা করছে, কিছুক্ষণ পর ফিরে আসবে। পরে জোবায়ের একাই ওই বিলের পানিতে নেমে ছোট ভাই হুসাইনকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। তখন সে–ও বিলের পানিতে তলিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় এক নারী গোসল করতে নামলে পায়ে মানুষের স্পর্শ পান। ভয়ে পানি থেকে উঠে তিনি চিৎকার শুরু করেন। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বিল থেকে প্রথমে হুসাইন ও পরে জোবায়েরকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার বলেন, পানিতে ডুবে ওই দুই শিশু মারা গিয়েছিল। মৃত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে আনা হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দুটো বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনেরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ বাড়িটিতে এসেছেন। তাঁরা বাবা মনির হোসেন ও মা শাহেদা আক্তারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। দুই শিশুর এমন মৃত্যু এলাকার কেউ মেনে নিতে পারছেন না। শাহেদা কেবল আহাজারি করছেন। মৃত দুই ছেলের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন।
স্বজনেরা জানান, হাসপাতাল থেকে দুজনের লাশ নিয়ে আসার পর গতকাল রাতেই জানাজা শেষে দাফন করা হয়। কারও বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নেই। মামলাও করতে চাননি। পুলিশকে না জানিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুজনের লাশ দাফন করা হয়েছে।
মা শাহেদা বেগম বলেন, ‘দুই ছেলে ঘরে ফিরছে না দেখে আমরা বিলের পাড়ে যাই, দেখি দুই ছেলের লাশ পাড়ে তুলে রাখছে। আমার দুইটা ছেলেই তো আর নাই। তারাই তো আমার সবকিছু ছিল, এখন আমি কীভাবে বাঁচব?’