বিএনপির কোনো পদে না থেকেও সরব কবির আহমেদ। একসময় তিনি ছাত্রলীগ করতেন। তাঁর ভাই তারেক জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী।
কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা বিএনপিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ছয় দিনের ব্যবধানে দুই উপজেলায় বিএনপি ও দলের সহযোগী সংগঠনের ৮ নেতাকে বহিষ্কার ও ১৫ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) করা হয়েছে। দুই উপজেলাতেই নতুন করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় দলীয় কোন্দল চরমে পৌঁছেছে।
নেতা-কর্মীরা বলেন, ৫ অক্টোবর আখাউড়া ও ১৯ অক্টোবর কসবা উপজেলা বিএনপির সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। কসবায় ১৬ সদস্যের ও আখাউড়ায় ১৩ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সম্মেলন ঘিরে দুই উপজেলায় বিএনপির রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। এর মধ্যে ত্যাগী-নির্যাতিত নেতাদের বহিষ্কার করে অনুগত সমর্থকদের পদে বসাতে সম্মেলনে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান। এরপর নবম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পান মুশফিকুর।
এদিকে, জেলা ও উপজেলার কোনো কমিটির পদে না থেকেও এই আসনে সরব কবির আহমেদ ভূঁইয়া। সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা কবির আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান ওরফে সানির আপন বড় ভাই কবির। কসবা ও আখাউড়া নিজের পছন্দে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের কমিটি দিয়েছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।
জেলা ও উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, কবিরের নির্দেশে জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক প্রয়াত জিল্লুর রহমান ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কসবা, আখাউড়াসহ ৯ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের ১১ মার্চ কমিটি বাতিলের দাবিতে আখাউড়া ও কসবায় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন হয়। সে সময় অনেকেই পদত্যাগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুশফিকুর রহমান গত ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী এলাকার এই দুই উপজেলায় বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে বিএনপি ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতারা যোগ দেন। এরপর ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কসবা ও আখাউড়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের ৮ নেতাকে বহিষ্কার ও ১৬ জনকে শোকজ করা হয়।
আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর দলীয় নেতাদের বহিষ্কারসহ শোকজের বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করেছেন মুশফিকুর রহমান।
এ ছাড়া ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকসহ বিএনপির ১৩ নেতা এক যৌথ বিবৃতি দেন। এতে কসবা ও আখাউড়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের শোকজসহ বহিষ্কারাদেশকে অবৈধ, অনৈতিক, অসাংগঠনিক ও অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা হাফিজুর ও জহিরুল জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। কিন্তু কবিরবিরোধী হিসেবে পরিচিত। বহিষ্কার হওয়া কসবা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুশফিকুর রহমানের জনসভায় যোগ দেওয়ায় কবিরের নির্দেশে দলীয় নেতাদের বহিষ্কারসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে বাদ দিতেই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।’
কবিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কসবা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক বলেন, যাঁদের বহিষ্কার ও শোকজ করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি, জায়গা ও দোকান দখল নানাসহ অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলীয় সভা-মিছিলে তাঁরা ছিলেন না।