সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দুদিন পর আজ সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে উড়াজাহাজে করে সিলেটে পৌঁছেছেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে গেলেও মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া আটজন নেতা তাঁর পাশে ছিলেন না। এটি বিভেদের আভাস কি না, তা নিয়ে তৃণমূলে এখন চলছে কানাঘুষা।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হয়তো মনের চাপা কষ্ট থেকে মনোনয়নবঞ্চিত কয়েকজন নেতা বিমানবন্দরে যাননি। তবে ধীরে ধীরে বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দুই–চার দিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। মনোনয়ন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ বা বিভেদের কোনো ঘটনা দলে ঘটবে না। এর কোনো আভাসও আমরা পাচ্ছি না। ঐক্যবদ্ধভাবেই আমরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করব।’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১১ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান ছাড়া বাকি সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আনোয়ারুজ্জামানকে গত শনিবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরে সিটি নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই।
এর পর থেকে স্থানীয় নেতারা বলে আসছেন, আনোয়ারুজ্জামানকে ছাড়া স্থানীয় যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বাকিরা একযোগে কাজ করবেন। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কেউ কেউ।
মহানগর আওয়ামী লীগের দুজন নেতা জানিয়েছেন, বিএনপিদলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যদি মেয়র প্রার্থী না হন, তাহলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কিংবা অন্য কোনো পদধারী নেতা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে পারেন।
আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিমানযোগে ঢাকা থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজারো নেতা-কর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। সিলেট জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত দুজন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ওরফে সেলিম ও আরমান আহমদ ওরফে শিপলু।
বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকা ছালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। তবে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁর হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন, আমরা তাঁর সঙ্গেই আছি। দলে প্রতীক পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে কোনো বিভেদ নেই। নৌকার বিজয় প্রশ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কেন বিমানবন্দরে এলেন না, তা আমার জানা নেই।’
বিমানবন্দরে অনুপস্থিত থাকা বাকি আটজন নেতা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন ওরফে সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও আবদুল খালিক, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম এ হাসান ওরফে জেবুল, আজাদুর রহমান ওরফে আজাদ, সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মাহি উদ্দিন আহমদ ওরফে সেলিম। তাঁদের মধ্যে জাকির হোসেন ও আজাদুর রহমান দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে গেছেন বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠজনেরা নিশ্চিত করেছেন।
আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগরের দুটি পৃথক স্থানে ইফতার বিতরণের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। তাই বিমানবন্দরে যেতে পারিনি। এর বাইরে অন্য কোনো কারণ ছিল না। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে প্রার্থী করেছেন, তাঁর পক্ষেই আমরা আছি।’ মো. মাহি উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় বিমানবন্দরে যেতে পারিনি। তবে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেব।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত এক নেতাসহ ওয়ার্ড পর্যায়ের পাঁচজন নেতা বলেন, গত দুটি সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি হঠাৎ ঘোষণা দেন, মেয়র পদে নির্বাচন করতে দলের উচ্চপর্যায়ের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছেন। মহানগরের রাজনীতিতে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ না থাকায় মনোনয়ন পাওয়ার পরও আনোয়ারুজ্জামানকে দলের একটা অংশ মেনে নিতে পারছে না। ওই অংশটি ভেতরে–ভেতরে ক্ষুব্ধ। এর জের ধরে তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে মনোনয়নবঞ্চিত অনেকে উপস্থিত হননি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে এবং ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ঠেকাতে দল পদক্ষেপ না নিতে পারলে আনোয়ারুজ্জামানকে নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
২০০২ সালে সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। এই মহানগরের আয়তন ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার, ওয়ার্ড ৪২টি। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এবার পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম চারবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন।