পানি জমে খেতের ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পটুয়াখালীর আউলিয়াপুরের বলইকাঠি গ্রামে
পানি জমে খেতের ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পটুয়াখালীর আউলিয়াপুরের বলইকাঠি গ্রামে

পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ফসলের ক্ষতি ২৬ কোটি টাকা

কৃষক আল ইসলাম হাওলাদারের (৪৫) ৪০ কড়া (১ একর ২০ শতাংশ) ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমিতে বছরজুড়ে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন। এই মৌসুমেও আউশ ধান আবাদ করার জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ওই বীজতলা তিন দিন ধরে তলিয়ে রয়েছে। ফলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বলইকাঠি গ্রামে কৃষক আল ইসলামের বাড়ি।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় আরেক কৃষক কবির সিকদারের (৪০) সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর ১০ কড়া (৩০ শতাংশ) খেতে বাদাম, মরিচ ও মুগডালের আবাদ করেছিলেন। খেত থেকে মুগডাল তুলেছেন। সেখানে বাদাম ও মরিচগাছ ছিল। গত রোববারের ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে তাঁর খেত তলিয়ে গেছে। এখনো খেত থেকে পানি নামেনি। এ অবস্থায় বাদাম ও মরিচ পচে যাবে।

বলইকাঠি গ্রামের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের কাছেই নুরুজ্জামাল হাওলাদার (৩৫) নামের আরেক কৃষক তাঁর খেত থেকে মরিচ ও বাদামগাছ তুলে দেখছিলেন। তিনি জানান, ১৫ কড়া (৪৫ শতাংশ) খেতে তিনি মরিচ ও বাদামের আবাদ করেছেন। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে খেত তলিয়ে রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীর প্রায় ৫৮ হাজার কৃষকের সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর খেতের ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ২৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ও জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিনাবাদাম, মরিচ ও শাকসবজির খেত। উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে পেঁপে, আম ও কলাগাছ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয় জানায়, জেলায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসলের আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ ফসলই ঘরে তুলেছে কৃষক। ৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর খেতে ফসল ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় বোরো ৫৭০ হেক্টর, আউশ ১ হাজার ৪৩ হেক্টর, চিনাবাদাম ৩৫০ হেক্টর, মরিচ ১৩২ হেক্টর, মুগডাল ২ হাজার ৩৯১ হেক্টর, তিল ৮৯ হেক্টর, ফেলন ৫৫ হেক্টর, শাকসবজি ১ হাজার হেক্টর, পাট ৫৮ হেক্টর, পান ৬১২ হেক্টর, আম ৬৫০ হেক্টর, কলা ৪২০ হেক্টর ও পেঁপে ২২০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুয়ায়ী ফসলের ক্ষতি ২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৩০৪ জন কৃষক।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন মৌসুমে ১৮ হাজার ২০০ জন কৃষককে বিনা মূল্যে সার ও বীজ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হবে। যেসব কৃষক ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণোদনা দেওয়া হবে।